সহসা বিমানের ডানা মেলা হচ্ছে না কানাডায়

২০২০ সালের অক্টোবরে ঢাকা থেকে কানাডার টরেন্টোতে ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। তবে বেশ কয়েক ধাপে হোঁচট খেয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটি। একদিকে বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারির ভয়াবহ প্রকোপ, অন্যদিকে কানাডার সিভিল এভিয়েশনের জুড়ে দেওয়া নানা শর্তের কারণে সহসা জটও খুলছে না বহুকাঙ্ক্ষিত এ আকাশপথের।

ট্রান্সপোর্ট কানাডা সিভিল এভিয়েশন (টিসিসিএ) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বিমানকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে সরাসরি যেতে হবে কানাডায়। মাঝে তারা অন্য কোনো দেশের ট্রানজিট (গমন) নিতে পারবে না। সেটা করলে ঢুকতে পারবে না কানাডায়।

এক সময় ২৮টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করত বাংলাদেশ বিমান। বর্তমানে লন্ডন ছাড়া ইউরোপের অন্য কোনো গন্তব্যে যেতে পারছে না সংস্থাটি। অথচ ২০২০ সালের শীত মৌসুমে বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার দিয়ে কানাডার টরেন্টোতে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল বিমানের। জানা গেছে, অডিট ও ট্রানজিট ইস্যুতে আটকে আছে বিমানের এ রুটের ফ্লাইট পরিচালনার কার্যক্রম।

একই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেও সহসা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থাটি।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে সবকিছু রেডি (প্রস্তুত)। বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ- বেবিচকের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিলেই আমরা ফ্লাইট চালু করতে পারব।’

তবে, বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, তাদের এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে টরেন্টো যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য ট্রানজিট রুট ঠিক করা হয়েছে। রুটগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে ট্রানজিটের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ টরেন্টোর যাত্রীদের পাশাপাশি ম্যানচেস্টারের যাত্রীও নিয়ে যাবে বিমান। সেখানে যাত্রী নামিয়ে ও তুলে টরেন্টোর উদ্দেশে রওনা হবে। তবে টিসিসিএ বলছে, সরাসরি তাদের দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে বিমানকে। তাহলে মেলবে অনুমতি।

এদিকে, করোনা মহামারির কারণে ইন্সপেকশন (নিরীক্ষা) কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। ফলে ফ্লাইট কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জিএম, মার্কেটিং) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেবিচক ও কানাডার কিছু অনুমতিপত্র এখনো বাকি আছে। কানাডার সিভিল এভিয়েশন বাংলাদেশে এসে কিছু ইন্সপেকশন করবে, কিছু ক্লিয়ারেন্স (ছাড়পত্র) দেওয়ার ব্যাপার আছে। এগুলো সম্পন্ন না হলে আমরা ফ্লাইট চালু করতে পারব না। এখন করোনা মহামারির কারণে ইন্সপেকশন ও ক্লিয়ারেন্স কার্যক্রম পেছাচ্ছে। তবে আগামী উইন্টার শিডিউলে (শীতকালীন সময়সূচি) ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’

তবে, বেবিচক বলছে ভিন্ন কথা। বিমানের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার বিষয়টি বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তাতে ২০২২ সালের আগে ফ্লাইট চালুর বিষয়টি প্রায় অসম্ভব। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এয়ারক্রাফট (উড়োজাহাজ) কিনেছে এসব রুটে (কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র) যাওয়ার জন্য। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তৃতীয় একটি দেশ হয়ে (ট্রানজিট) কানাডায় প্রবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। সেই অনুমতি কানাডা দেয়নি। তারা অনুমতি দিলেই আমাদের পক্ষ থেকে বিমানকে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
 
বাংলাদেশিরা বর্তমানে যেভাবে কানাডায় যাচ্ছেন

বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স বিভিন্ন দেশের ট্রানজিট নিয়ে কানাডার টরেন্টোতে পৌঁছাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ ৯৩ হাজার টাকা, টার্কিশ এয়ারলাইন্স এক লাখ এক হাজার টাকা এবং এমিরেটস এয়ারওয়েজ এক লাখ ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ট্রানজিট নিয়ে সর্বনিম্ন ২৩ থেকে ২৬ ঘণ্টায় বাংলাদেশিদের টরেন্টো পৌঁছে দিচ্ছে। বিমান যদি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে তাহলে মাত্র ১৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশি যাত্রীদের টরেন্টো পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

এ বিষয়ে প্রবাসীরা বলছেন, বিমান তার ফ্লাইটের শিডিউল ঠিক রাখতে পারলে এ রুটে অনেক যাত্রী পাবে। এটি বিমানের অন্যতম লাভজনক একটি রুট হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ কত দূর

বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়ে ২০২০ সালের উইন্টার শিডিউলে (শীতকালীন সূচি) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনার প্রক্রিয়া শুরু করে বিমান। এজন্য এয়ার কানাডার সঙ্গে চুক্তিও করেছিল তারা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানায়, বিমান নিউ ইয়র্ক ফ্লাইটের যাত্রীদের ঢাকা থেকে প্রথমে কানাডায় নিয়ে যাবে। সেখান থেকে বিমানের পার্টনার এয়ার কানাডা যাত্রীদের নিউ ইয়র্কে পৌঁছে দেবে।

তবে সহসা চালু হচ্ছে না এ ফ্লাইটও। এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ জানায়, প্রথমত, এটি টরেন্টো ফ্লাইটের ওপর নির্ভরশীল। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এ ফ্লাইটের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি অডিট করবে বলে জানিয়েছিল। করোনার কারণে সে কার্যক্রম বেশ কয়েক দফা পিছিয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের (২০২১ সাল) এপ্রিলে অডিট করার কথা ছিল। সেটিও হয়নি। অডিটের পর অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগবে ফ্লাইট চালু করতে। সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চললেও ২০২২ সালের আগে এ ফ্লাইট চালু প্রায় অসম্ভব।

বিমানের নতুন পরিকল্পনা

বিমান বাংলাদেশ জানায়, ভবিষ্যতে জাপানের টোকিও, ভারতের চেন্নাই, চীনের গুয়াঞ্জু, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা আছে তাদের। চেন্নাই ও গুয়াঞ্জু রুটের ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি যখন প্রায় শেষ তখনই করোনার প্রথম ঢেউ আঘাত হানে। ফলে ওই দুই রুটে এখনো ফ্লাইট চালু করতে পারেনি বিমান।

এআর/এমএআর/