‘শুধু আগস্ট মাস হওয়ায় ১৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা যায়নি’

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) দেশের অন্যতম একটি বিশেষায়িত বিদ্যাপীঠ। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি আলোচনায় রয়েছে। প্রাণীজগতের চিকিৎসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হসপিটালিটি চট্টগ্রামবাসীর কাছে আস্থার প্রতীক। এটি দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানকার শিক্ষার্থীরা শতভাগ বিদেশে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পান। আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যসূচি ও গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠানটি সুনাম কুড়িয়েছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান কথা বলেছেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রহমান মিজান।
ঢাকা পোস্ট : জুলাই আন্দোলনের পর ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার বিশেষ পরিকল্পনা কী?
ড. লুৎফুর রহমান : আমি নিয়োগ পাওয়ার পর দেখি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারো সমস্যা। বিগত ১৬-১৭ বছরের যত অনিয়ম-দুর্নীতি সবকিছু আমার ওপর এসে পড়ল। এগুলোর বিচার করা, তদন্ত করা এবং দেখাশোনার দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায়। ছাত্রদের পক্ষ থেকে অনেকগুলো দাবি ছিল, একইভাবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বিভিন্ন দাবি ছিল। আমি ধীরে ধীরে সবগুলো দাবি পূরণ করে একটির পর একটি সমস্যার সমাধান করে যাচ্ছি। আমার যোগদানের পর সার্বিক কার্যক্রমের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমি সক্ষম হয়েছি।
ইতোমধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে অনেককে শাস্তির আওতায় এনেছি এবং চাকরিচ্যুত করেছি। যেসব শিক্ষার্থী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরও শাস্তি দিয়েছি। আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে, যেগুলো গণতদন্ত কমিশনের মাধ্যমে সমাধান করার কাজ চলছে।
এটি একটি দিক। আরেকটি দিক হলো অ্যাকাডেমিক বিষয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনেক দাবি ছিল, বিশেষ করে অ্যাকাডেমিক, পরীক্ষা ও সিলেবাস সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে। বহুদিন ধরে এসব বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এগুলো সংস্কার করা একটি বড় বিষয় ছিল এবং আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। এখন অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন সিস্টেম চালু করতে চাই। এ ধরনের কার্যক্রমগুলো হাতে রয়েছে।
দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আমি বলেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যেহেতু এটি একটি ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, আমি এটিকে গুণ, মান ও দক্ষতায় দেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় করতে চাই। এটিই আমার প্রথম দিনের অঙ্গীকার ছিল এবং সেই অঙ্গীকার নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমাদের লোকবল কম। তা ছাড়া, ফ্যাসিস্টের অনুসারীর সংখ্যা বেশি। বলা যায়, আমরা এখানে ১০ থেকে ১২ জন আছি, যারা ৫ আগস্টের পরবর্তী বিশ্বাসকে ধারণ করে চলছি। লোকবল সংকট থাকা সত্ত্বেও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

ঢাকা পোস্ট : সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এবারের আয়োজন সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। এর আগে বড় পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়নি। এ বিষয়ে একটু ব্যাখ্যা করবেন?
ড. লুৎফুর রহমান : আমরা ১৯৯৫ সালে প্রথম কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করি এবং ২০০৬ সালে কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একটা সময়। এই সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করতে পারিনি। এতদিন যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা এটি করতে আগ্রহও দেখাননি।
৭ আগস্ট আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ফ্যাসিস্ট আমলে পুরো আগস্ট মাসই ছিল শোকের মাস, কোনো উৎসব পালন করতে দেওয়া হতো না। সেই সময় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করতে পারিনি। এবারই হাতে সুযোগ এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যাদের অবদান রয়েছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটিতে ছিলেন, তাদের অনেকেই মারা গেছেন। আমরা তাদের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তারা আমাদের কাছে আলোকিত মানুষ। তাদের কারণেই আজকের এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে পারছি। সুতরাং তাদের প্রতি সামান্য সম্মান জানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলাম। সেই তাগিদেই প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আয়োজন করি।
ঢাকা পোস্ট : যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?
ড. লুৎফুর রহমান : শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দেখেছি। এখন সেই সুযোগ থাকবে না। যারা যোগ্য, তারাই নিয়োগ পাবে। আমি নিশ্চিত করে বলছি, নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু যোগ্যতা দেখা হবে, কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নয়।
ঢাকা পোস্ট : অতীতে শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন নিয়োগে দলীয়করণের অভিযোগ ছিল। এ কারণে নানা অনিয়মের মাধ্যমে অনেকের নিয়োগ এবং পদোন্নতি হয়েছে। এবার দলীয়করণ থেকে বের হতে পারবেন?
ড. লুৎফুর রহমান : শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি প্রবণতা হলো— প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের বাইরে নিয়োগ দেওয়া হয় না। কিন্তু বিগত সময়ে এর সুস্পষ্ট ব্যতিক্রম ঘটেছে। পেছনের সারির প্রার্থীদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি হস্তক্ষেপ করে দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। বিগত প্রশাসন কোনোভাবেই এই দলীয়করণ থেকে বের হতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এই আশা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে যে, এ দেশে আর কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হবে না। সেই আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এই বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘটবে। আমি কখনো চাইব না এখানে অযোগ্য লোক আসুক বা দলীয়করণ হোক। আমি চাই এখানে জ্ঞানী ও যোগ্যদের সমাগম হোক। অতীতকে অনুসরণ না করে আমরা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।’
ঢাকা পোস্ট : বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা বাড়াতে আপনার কী কী উদ্যোগ রয়েছে?
ড. লুৎফুর রহমান : আমরা একটা জিনিস দাবি করি যে এটি বাংলাদেশের কৃষিশিক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। কেন আমরা এটি দাবি করি, তার কিছু কারণ আছে। প্রথমত, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি বিশ্বমানের। আমাদের ল্যাবরেটরিগুলো খুবই উন্নতমানের এবং আমাদের দেশের পাশাপাশি বিশ্বের অনেক নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাবোরেশন রয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা দক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন এবং উদ্যমী। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বিশ্বমানের ডিগ্রি প্রদান করছি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু স্বতন্ত্র কার্যক্রম রয়েছে, যা গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষ করে তুলতে ভূমিকা পালন করে। যেমন- ইন্টার্নশিপের বিষয়টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী দেশের বাইরে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পায়, যা একটি বড় অর্জন। শিক্ষার্থীরা ইউএসএ, কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টার্ন করার সুযোগ পায়।
আমরা ইউরোপ ও আমেরিকার আদলে প্রবলেম বেসড লার্নিং নামে একটি কোর্স চালু করেছি। এখানে ১২-১৪ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একজন শিক্ষক থাকেন। শিক্ষার্থীরাই কেস ডিল করে, তারাই প্রেজেন্টেশন দেয়, তারাই প্রশ্ন করে এবং তারাই একে অপরের সঙ্গে বিতর্ক করে। শিক্ষক শুধু বসে থাকেন। এটি একটি বিশেষায়িত ক্লাস।
ঢাকার পূর্বাচলে আমাদের একটি পেট হসপিটাল রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন সার্জারি ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে অনেক সেবাপ্রত্যাশী উপকৃত হচ্ছে। এছাড়া মূল ক্যাম্পাসে যে হসপিটালটি আছে, সেখানেও প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা সেখানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের দুটি বিশ্বমানের মিউজিয়াম রয়েছে। একটি হলো ফিশারিজ মিউজিয়াম, অন্যটি এনাটমি মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামগুলো শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক কাজের পাশাপাশি থিওরি ক্লাস করা এবং শিক্ষকদের গবেষণায় সহায়তা করছে। এগুলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতার ভাণ্ডার বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
তা ছাড়া, আমাদের পোল্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিআরটিসি) আছে। সেখানে গবেষণা, ট্রেনিং এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। এখানে জেনেটিক ডায়াগনোসিস এবং ফিড অ্যানালাইসিস করার সুযোগ রয়েছে। কক্সবাজারে আমাদের একটি রিসার্চ সেন্টার আছে। সেখানে ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছি। কারণ সাগরের নিচে অফুরন্ত সম্পদ থাকলেও এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশ তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছে। আমাদের যারা ফিশারিজ নিয়ে গ্র্যাজুয়েট রয়েছেন, তারা সেখানে গবেষণা করছেন কীভাবে সাগরের এই সম্পদকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা যায়।
হাটহাজারীতে একটি ফার্ম বেসড রিসার্চ সেন্টার রয়েছে। সেখানে একটি ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন আছে, যেখানে আমরা খাবারের ওপর কাজ করছি। এ দেশের মানুষের পুষ্টি ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ছাড়া গবেষণায়ও ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছি। বিভিন্ন অর্গানিজমের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স, যেমন- ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগলের জিনোম সিকোয়েন্স আমরা করেছি। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সও সম্পন্ন করেছি। করোনা মহামারির সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় যে ভূমিকা পালন করেছে, তা দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। ওই সময় দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা আরও ৬-৭টি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিসিআর যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছি।
ঢাকা পোস্ট : ক্যাম্পাসে আপাতত ছাত্ররাজনীতি নেই। কোনো দল শুরু করতে চাইলে আপনার পরিকল্পনা কী?
ড. লুৎফুর রহমান : এটি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাভাবিকভাবে এখানকার শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করার সুযোগ কম থাকে। কারণ পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকেই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, ফলে তারা খুব একটা সময় পায় না। এখানকার পরিবেশ শিক্ষাবান্ধব। ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানানো হয় এবং আমরাও তাদের দাবির সঙ্গে একমত।
শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে পারে, তবে রাজনীতি মানে কাউকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা নয়। আগে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করত, তারা প্রশাসনকে বিপদে ফেলা এবং ফায়দা নেওয়া ছাড়া শিক্ষাবান্ধব কিছু করেছে বলে আমি কখনো দেখিনি।
ঢাকা পোস্ট : দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভিসিদের নানা অনিয়মের খবর বের হয়। আপনার মেয়াদ শেষে কী প্রত্যাশা করছেন?
ড. লুৎফুর রহমান : অতীতে খুব কম ভিসিই আছেন যারা মানসম্মান নিয়ে বিদায় নিতে পেরেছেন। এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে যারা আসছেন তাদের ব্যাপারে অনেক যাচাই-বাছাই হয়েছে। বলা যায়, এখনকার ভিসিরা যেকোনো সময়ের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো।
শুরু থেকেই আমার অঙ্গীকার ছিল যে, বিগত সময়ে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর এসেছে, আমার বিরুদ্ধে যেন সেরকম কোনো অভিযোগ না আসে। এ ব্যাপারে আমি সবসময় সজাগ থেকে কাজ করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কাজে আমি যেন জড়িত না হই বা আমাকে যেন জড়াতে না পারে— এ বিষয়ে আমি অত্যন্ত সতর্ক থাকব।
ঢাকা পোস্ট : দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। কোনোদিন কি মনে হয়েছে এই পেশায় এসে ভুল করেছেন?
ড. লুৎফুর রহমান : আমার বাবা শিক্ষক, ভাই শিক্ষক, বোন শিক্ষক, এমনকি চাচা-জেঠারাও শিক্ষক। আমাদের বাড়িকে মাস্টারবাড়ি বলা হয়। শিক্ষকতা পেশার প্রতি আমার দুর্বলতা ছোটবেলা থেকেই ছিল। এর চেয়ে ভালো পেশা আর হতে পারে না। এখানে যে সম্মান আছে তা অন্য পেশায় নেই। শিক্ষকতা এমন একটি পেশা, যেখানে সরাসরি মানুষের উপকার করা যায়।
আমার কাছে শিক্ষকতা একটি লোভনীয় পেশা। আমি অন্য পেশা ছেড়ে এখানে এসেছি। সুতরাং, আফসোসের প্রশ্নই আসে না। শিক্ষকতায় এসে আমি কিছু করতে পারি আর না পারি, একটি মিউজিয়াম করেছি। বাংলাদেশে এমন মিউজিয়াম নেই, এমনকি এশিয়াতেও এমন মিউজিয়াম খুব কমই আছে। এটি নিয়ে আমি সারাজীবন আত্মতৃপ্তি নিয়ে থাকতে পারব।
ঢাকা পোস্ট : শিক্ষকতা জীবনে আপনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কোনটি?
ড. লুৎফুর রহমান : আমরা শিক্ষকতার মাধ্যমে সরাসরি মানুষের জন্য কাজ করি এবং ছাত্র তৈরি করি। আমার ২৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে অসংখ্য ছাত্র বেরিয়েছে। তারা দেশে এবং দেশের বাইরে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। দেশের জন্য, জাতির জন্য সুনাম বয়ে আনছে— এটিই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ঢাকা পোস্টের জন্য কিছু বলবেন?
ড. লুৎফুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ। ঢাকা পোস্ট বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে মানুষের মনে আস্থা তৈরি করুক— এটাই আমার প্রত্যাশা।
আরএমএন/এমজে