সব গাড়িই আইন ভাঙছে, প্রতিদিন আড়াই লাখ মামলা হওয়া উচিত

ঢাকার সড়ক মানেই যেন যানজট, বিশৃঙ্খলা আর দুর্ঘটনার ভয়। প্রতিদিন লাখো মানুষ এই দুর্ভোগের মুখোমুখি হন। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ কী করছে, প্রযুক্তি কতটা কার্যকর হচ্ছে, আর শিক্ষার্থীরা কেন এখনো সড়ক নিয়ন্ত্রণে আছে— এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজধানীবাসীর মনে।
রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সংকট, সম্ভাবনা ও উদ্যোগের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার। সম্প্রতি তাকে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি উন্মোচন করেছেন ট্রাফিক ব্যবস্থার নানা অধ্যায়। তার মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মুছা মল্লিক।
ঢাকা পোস্ট : সড়ক দুর্ঘটনায় বিদ্যমান আইনে যে সাজা ও জরিমানার কথা আছে, পরিবহন মালিকেরা সেটি শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সরকার কি তাহলে তাদের আট দফা দাবি মেনে নিচ্ছে?
মো. সরওয়ার : তারা যে আট দফা দাবি দিয়েছিল, সেগুলোর কতটুকু মানা যায় এবং কতটুকু যায় না— এ বিষয়ে ১০ আগস্ট একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তারা কিছু আশ্বাস পেয়েছে বলেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে। তাদের দাবি-দাওয়া বিবেচনায় নেওয়ার জন্য কাজ চলছে। তাদের দাবি কতটুকু মানা হবে বা হবে না, সেটি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঢাকা পোস্ট : রাজধানীর যানজট নিরসনে পুলিশ নতুন কোনো পরিকল্পনা নিয়েছে কি?
মো. সরওয়ার : যানজট নিরসনে আমরা গত বছর থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল এবং আছে, সেগুলো সামনে রেখে ধীরে ধীরে এগোচ্ছি। প্রতিনিয়ত চেষ্টার ফলে সড়কে যানজট আগের চেয়ে অনেক কমেছে। আমাদের অনেকগুলো উদ্যোগের মধ্যে একটি হচ্ছে— আমরা ডিজিটাল ট্রাফিক প্রসিকিউশনে যাচ্ছি। আগে ম্যানুয়াল মামলা হতো, কিন্তু এখন আমরা ডিজিটাল মামলা শুরু করে দিয়েছি। যেমন— এক্সপ্রেসওয়েতে আমরা স্পিড মিটার ব্যবহার করে স্পিড রেকর্ড করে মামলা দিচ্ছি। এছাড়া, নিজস্ব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ডিজিটাল মামলা দিচ্ছি।
আরও পড়ুন
আমরা সরকারি গাড়ির অনিয়মের বিরুদ্ধেও মামলা দিচ্ছি। সুতরাং, মামলার ডিজিটাল কার্যক্রম এগিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সিটি কর্পোরেশন, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে রোড ডাইভারশন বা মডিফাই করে আমরা শহরের যানজট কমাচ্ছি। অনেক জায়গায় চার সিগন্যাল কমিয়ে তিনটাতে নিয়ে এসেছি। তিন সিগন্যাল কমিয়ে দুইটাতে নিয়ে এসেছি। ফলে একজন চালককে আগে যদি ছয় মিনিট সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেই সময়টা কমে দুই মিনিটে এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে ৬৫টি সিগন্যাল পয়েন্টে ডাইভারশন প্রক্রিয়া চালু করেছি। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে।
এছাড়া, আমাদের পর্যাপ্ত অফিসার কাজ করছে, যদিও জনবল সংকট রয়েছে। আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। তারাও আমাদের সহায়তা করছে।
আমরা খেয়াল রাখছি যাতে প্রধান সড়কে অটোরিকশা আসতে না পারে। প্রধান সড়কে যদি অটোরিকশা আসত, তাহলে যানজট আরও বেড়ে যেত। যদিও এখনো কিছু অটোরিকশা প্রধান সড়কে আসছে। তবে, এক্ষেত্রে অটোরিকশার চালকদের চেয়ে যাত্রীদের দায় বেশি। আমরা যাত্রীদের আহ্বান করব তারা এই রিকশা নিয়ে যেন প্রধান সড়কে না আসে। সড়কে অটোরিকশা আসলে তাদের ধরা হচ্ছে, ডাম্পিং করা হচ্ছে, অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট : কিন্তু রাস্তা ডাইভারশন করায় অনেক চালক ও যাত্রীর অসুবিধা হচ্ছে— এমন অভিজ্ঞতার কথা তারা জানিয়েছেন...
মো. সরওয়ার : সবাই সঠিকভাবে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বোঝে কি না— এটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যারা এটা বুঝবে, তারা অভিযোগ করবে না। এসব ডাইভারশন-এর ফলে ১ থেকে ২ শতাংশ লোকের অসুবিধা হলেও ৯৮ শতাংশ লোকের সুবিধা হচ্ছে। সেই সুবিধাটা দেখতে হবে। ২০২৪ সালে আমাদের গাড়ির গড় গতিবেগ ছিল পাঁচ কিলোমিটারের নিচে। ২০২৫ সালে আমাদের আশা এটা নয় থেকে ১০ কিলোমিটার হয়ে যাবে। আমরা ডিটিসি-কে অনুরোধ করেছি এই গতিবেগ পরিমাপ করতে। গত কয়েক মাসে গাড়ি চলাচলের গতি বেড়েছে কি না, আপনারাই দেখুন। আগে দু-একটি গাড়ির জন্য শত শত গাড়ি আটকে থাকত। এখন সেটা হচ্ছে না।
ঢাকা পোস্ট : সিসিটিভি ফুটেজ থেকে মামলা দেওয়ার কথা বললেন। এ উদ্যোগ আগেও নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি। এবার ভিন্ন কী থাকছে যে এটা সফল হবে?
মো. সরওয়ার : আমরা এটা মাত্র শুরু করেছি, আশা করছি সফল হব। এখানে মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য তেমন নয়। তবে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আমাদের যে স্পিড ক্যামেরা আছে, সেটা দিয়ে গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে আমরা মামলা করা শুরু করেছি। প্রথম অবস্থায় এখানে ওভার স্পিডে যেত গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ গাড়ি। এখন মামলার ফলে ওভার স্পিড করছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ গাড়ি। এখানে খুব ভালো কাজ হচ্ছে। আগের উদ্যোগে হয়তো প্রযুক্তি ততটা ব্যবহার করা হয়নি, কিন্তু আমরা এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি স্থায়ী ও টেকসই উদ্যোগ নিয়েছি।
আরও পড়ুন
আগে সড়কে একটি মামলা করতে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হতো। একটি মামলা সম্পন্ন করতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগত। কিন্তু এখন তো ভিডিও ফুটেজ দেখে মামলা হয়ে যাচ্ছে এবং মামলার কপি জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস)-এর মাধ্যমে তাদের ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট : আপনি বললেন— ‘এখনো শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করছে’। ৫ আগস্টের পর দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ভেঙে পড়লে শিক্ষার্থীরা জরুরি অবস্থায় দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তারা এখনো মাঠে আছেন। তাহলে ট্রাফিক পুলিশ কি এখনো ফিট হয়নি?
মো. সরওয়ার : ট্রাফিক পুলিশ অনেক আগেই ফিট হয়েছে। আমাদের জনবল যেহেতু কম, সেহেতু তারা সহযোগিতা করছে। আগে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আমাদের ৮০০ আনসার কাজ করত। কিন্তু তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই ঘাটতি তো রয়ে গেছে।
ঢাকা পোস্ট : শিক্ষার্থীরা তাহলে কবে ঘরে ফিরবে?
মো. সরওয়ার : আমাদের ট্রাফিক পুলিশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নয় শতাধিক। তাদের মধ্যে যারা ইচ্ছুক তারা কাজ করছে। তারা মূলত উল্টো পথে আসা গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সিএনজি বা মোটরসাইকেল নিয়ে তারা কাজ করছে। আশা করছি, তারা দ্রুত ঘরে ফিরতে পারবে। কারো ওপর তো জোর নেই। তারা মূলত সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এবং সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময় আমাদের সাহায্য করে।
ঢাকা পোস্ট : সড়কে এখনো অনেক অটোরিকশা আসছে। এটা কেন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রতিবন্ধকতাটা আসলে কোথায়?
মো. সরওয়ার : এটা ঠিক যে আমরা তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। তবে, ৯৫ ভাগ রিকশা কিন্তু এখন মেইন রোডে আসতে পারছে না। মাত্র ৫ শতাংশ আসে। এখানে রিকশার চালকের চেয়ে যাত্রীর সমস্যা বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা প্ররোচিত করে নিয়ে আসে। অনেকে সরকারি চাকরি করে, অনেকে রাজনীতি করে— তারা চালকদের বুঝিয়ে নিয়ে আসে যে পুলিশকে আমরা সামলাব।
যেসব জায়গায় বেশি যানজট হয়, সেসব জায়গায় আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের জনবল কম থাকায় সব জায়গায় সমানভাবে হয়তো সবকিছু করা সম্ভব হয় না। এই গরমে আমার লোকটা হয়তো একটু ওয়াশরুমে গেছে বা একটু নাস্তা খেতে গেছে, এই ফাঁকে অনেকেই চলে আসে। কিন্তু যেসব জায়গায় প্রচুর যানজট হয়, সেসব জায়গায় আমরা পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে সড়ক সুশৃঙ্খল করার চেষ্টা করছি।
ঢাকা পোস্ট : চালকদের অভিযোগ, সড়কে সার্জেন্টরা আগের চেয়েও বেশি মামলা দিচ্ছে। তারা বলছেন, সার্জেন্টদের প্রতিদিন মামলা দেওয়ার টার্গেট দেওয়া হয়। এ কারণে ছোট অপরাধেও মামলা হচ্ছে। আসলে কি তাদের টার্গেট দেওয়া হয়?
মো. সরওয়ার : টার্গেট বিষয় নয়। আমাদের টার্গেট হচ্ছে— যেসব গাড়ি যানজট তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতেই হবে। যানজট তৈরি করে এমন গাড়ি অনেক আছে। সেই হিসাবে আমরা মামলায় পিছিয়ে আছি। আমাদের গড়ে প্রায় এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার মামলা হয়। আমি মনে করি, প্রায় সব গাড়িই ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে। অনেকেই যত্রতত্র মোটরসাইকেল থামিয়ে রাখে। যত্রতত্র প্রাইভেটকার ও বাসে যাত্রী তোলা হয়। এখানে বাসের যেমন দোষ আছে, তেমন আছে যাত্রীরও। অনেক যাত্রী নির্ধারিত স্টপেজে না নেমে একটু আগে নামে; এতেই তৈরি হয় যানজট।
সড়কে দাঁড়ালেই দেখবেন বেশিরভাগ গাড়ি আইন মানছে না। মেজরিটি যদি আইন না মানে, তাহলে অন্তত আড়াই লাখ মামলা হওয়া উচিত। পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করার কথা, কিন্তু তারাও এটা মানে না। তাদের আইন ভঙ্গের জন্যও জরিমানা হতে পারে। বিশাল এই যানজটের জন্য আমাদের পথচারীরাও দায়ী। আমরা পথচারীদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সিগন্যাল লাইট লাগিয়ে দিয়েছি, এগুলো চাপ দিলে কয়েক সেকেন্ড পর সবুজ হলে তারা পার হবে; কিন্তু এটাও তারা মানতে চাইছে না।
আরও পড়ুন
প্রতিটি ক্রসিংয়ে একই অবস্থা। পথচারীরা যত্রতত্র যাতে পার না হতে পারে, সেজন্য আমরা বিভিন্ন বেড়াও দিয়েছি। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে আমাদের রাস্তার মতো চিত্র নেই। আমাদের দেশে একই রাস্তায় গরু জবাই দেওয়া হয়। বিয়ে-শাদি, ময়লা ফেলা, মারামারি, হকার, দোকানের এক্সটেনশন, গাড়ির ওয়ার্কশপ— কী নেই আমাদের এই শহরের রাস্তায়! ফুটপাত দখল করে যে বড়লোকেরা ব্যবসা করে, এটা নিয়েও কেউ কথা বলে না।
ঢাকা পোস্ট : প্রতিদিন দুই হাজার মামলায় মাসে গড়ে কত টাকা জরিমানা করা হয়?
মো. সরওয়ার : এগুলো তো সব সরকারি কোষাগারে যায়। মাসে গড়ে ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে যায়।
ঢাকা পোস্ট : এই মুহূর্তে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় ঘাটতি কোথায় বলে আপনার মনে হয়?
মো. সরওয়ার : ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা হলো একটি সমন্বিত উদ্যোগ। এটা কিন্তু পুলিশের একার কাজ নয়। যেমন- পূর্বাচলের ৩০০ ফিট রাস্তায় পুলিশের ওভার স্পিডিং মামলা করা ছাড়া আর খুব বেশি কাজ নেই। সেখানে সিগন্যাল দেওয়াও লাগে না। হাতিরঝিলে কোনো সিগন্যাল ও ট্রাফিক পুলিশও নেই। আগে আব্দুল্লাহপুর থেকে বনানী পর্যন্ত বেশকিছু সিগন্যাল ছিল। কাকলি ক্রসিংয়ে সিগন্যাল, বনানী ক্রসিংয়ে সিগন্যাল, বনানী স্টাফ রোড, রেলগেট, খিলক্ষেত, কাওলা, এয়ারপোর্ট মোড়, জসীমউদ্দীন, রবীন্দ্র সরণি, মাসকট প্লাজাসহ এই রাস্তার প্রতি মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল ছিল। কিন্তু এখন একটাও সিগন্যাল নেই। এসব জায়গায় এখন এয়ারপোর্ট ওভারপাস, জসীমউদ্দীন ওভারপাস, আব্দুল্লাহপুর ওভারপাসসহ রাস্তায় মডিফিকেশন আনায় বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। ফলে এখন সিগন্যাল নেই; তাই গাড়ি অনবরত আসতে পারে এবং যেতে পারে।
এখানে ট্রাফিক পুলিশের কাজ হলো ওভার স্পিড করলে কিংবা রাস্তার মাঝে পার্কিং করলে মামলা দেওয়া। অনেক সময় রাস্তার মাঝে গাড়ি নষ্ট হলে সেগুলো সরানোর জন্য ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে। এগুলো হলো আদর্শ রোড। এমন রাস্তা বিশ্বের সব জায়গায় আছে। অন্যান্য জায়গায় পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট যদি না থাকে, তাহলে সেসব জায়গা উন্নত করতে হবে। উন্নত করতে পারলে যানজট অনেক কমে আসবে। অবশ্যই এসব বিষয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি।
আরও পড়ুন
কুড়িল থেকে শুরু করে রামপুরা হয়ে সায়দাবাদ জনপথ পর্যন্ত যদি ডেভেলপ করা যায়, তাহলে যানজট আরও কমে আসবে। এই রোডের অনেক সিগন্যাল আমরা কমিয়ে ফেলেছি। এই রাস্তাতেও ওভারপাস করা প্রয়োজন। রিকশামুক্ত করার পাশাপাশি রাস্তার আরো উন্নয়ন প্রয়োজন। শুধু এই রাস্তা নয়; রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ত রাস্তাগুলোকেও আধুনিকায়ন করতে হবে, তাহলেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দারুণ পরিবর্তন আসবে।
পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো, ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট বাড়ানো প্রয়োজন।
ঢাকা পোস্ট : ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মামলার কথা বললেন; আপনাদের কাছে কি এমন ক্যামেরা আছে যেগুলো সড়কে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগের গাড়ি এবং তার নম্বর প্লেট শনাক্ত করতে পারে?
মো. সরওয়ার : আমাদের সার্জেন্ট স্পিড গান ব্যবহার করেন। এটা দিয়ে তারা গতি পরিমাপ করে গাড়ি থামিয়ে মামলা দেন। তবে, এটাতে সব গাড়ির রিডিং নেওয়া যায় না। আমরা এখন স্পিড ক্যামেরা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করেছি। এটা শেষ করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। ৩০০ ফিটের রাস্তায় এখন প্রতিদিন ওভার স্পিডের জন্য ২৫-৩০টি মামলা হচ্ছে, কিন্তু এখানে স্পিড ক্যামেরা বসালে প্রতিদিন মামলা হবে ৩০০-এর উপরে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আগে আমাদের সার্জেন্টরা ২৫ থেকে ৩০টি মামলা করত, কিন্তু এখন সেখানে প্রায় ৫০৯টি মামলা হচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট : কেমন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দেখতে চান?
মো. সরওয়ার : ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করতে জনগণ ছাড়াও অনেকগুলো সরকারি সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। যেমন- পদ্মাসেতু-সংলগ্ন মাওয়া রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সাথেই এসব ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ৩০০ ফিট রাস্তায়ও ক্যামেরা বসানো উচিত ছিল। আমরা এ বিষয়ে রাজউককে চিঠি দিয়েছি। সরকারের সব সংস্থা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আরও সক্রিয় হয়ে যদি কাজ করে, তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভালো হবে।
সড়কের উন্নয়ন হলে ৯০ শতাংশ যানজট কমবে, আর ট্রাফিক পুলিশের কাজ বাকি ১০ শতাংশ। এয়ারপোর্টের রাস্তাটিই তার প্রাকটিক্যাল উদাহরণ। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, রাস্তাঘাট মেইনটেন্যান্স ও মডিফিকেশনটা সঠিকভাবে হলে অনেক সমস্যা কমে আসবে। এছাড়া, রাস্তাঘাট কাটাকাটির জন্য সমন্বয় প্রয়োজন। বিকল্প রাস্তা তৈরি না করে যদি রাস্তা কাটা হয়, তাহলে কিন্তু সক্রিয়ভাবে যানজট বেড়ে যাবে। উন্নত দেশে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করলে ওপর দিয়ে অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয়। এতে মানুষের ভোগান্তি কমে। সুতরাং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সবগুলো সংস্থা আরও আন্তরিকভাবে কাজ করলে মসৃণ ও টেকসই ট্রাফিক ব্যবস্থা উপহার দেওয়া সম্ভব।
ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. সরওয়ার : আপনাকেও ধন্যবাদ। ঢাকা পোস্টের জন্য শুভকামনা।
