হঠাৎ হার্ড ব্রেকে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন নতুন আতঙ্কের নাম। কোনো ধরনের আইনকানুন বা সড়ক পরিবহন বিধি না মেনে এসব যানের চালকেরা মহাসড়ক থেকে শুরু করে গলিপথ পর্যন্ত— সব জায়গায় অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণহীন গতি, বেপরোয়া চালনা আর হঠাৎ ব্রেক চাপার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে অসংখ্য ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ফলে পথচারী, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের চালকসহ সবাই নতুন বিপদের মুখে পড়ছেন।
মহাসড়ক, জেলা ও উপজেলা সড়ক তো বটেই; শহরের গলিপথ, উড়ালসড়ক এমনকি ফুটপাতেও এদের অবাধ বিচরণ। অথচ সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী এসব যানের জন্য কোথাও কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। তবুও চালকেরা বিনা দ্বিধায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামছেন, সড়কে তৈরি করছেন ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা।
আরও পড়ুন
সড়কের ‘অঘোষিত শাসক’ ব্যাটারিচালিত রিকশা
গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন সড়কের এক ‘অঘোষিত শাসক’। মহাসড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি কিংবা উড়ালসড়ক— কোনো জায়গাতেই এদের বিচরণ বাদ নেই। সম্প্রতি উত্তরা, খিলক্ষেত, বাড্ডা, মিরপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি সড়কেই এসব রিকশার বেপরোয়া চলাচল যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা এখন সড়কের এক ‘অঘোষিত শাসক’। মহাসড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি কিংবা উড়ালসড়ক— কোনো জায়গাতেই এদের বিচরণ বাদ নেই। সম্প্রতি উত্তরা, খিলক্ষেত, বাড্ডা, মিরপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি সড়কেই এসব রিকশার বেপরোয়া চলাচল যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে
উত্তরা এলাকার হাউজবিল্ডিং, আজমপুর, রাজলক্ষ্মীসহ প্রতিটি সেক্টরেই প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট চোখে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে এই যানগুলো কেবল অভ্যন্তরীণ সড়কেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আজমপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মহাসড়কেও এরা নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। অনেক সময় বাস বা প্রাইভেট কারের সঙ্গেও এদের গতির প্রতিযোগিতা চলে।
এ কারণে প্রতিদিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারী, প্রাইভেটকারের চালক, মোটরসাইকেলের আরোহী ও সাধারণ যাত্রীরা। অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেছেন।
এরা খুব দ্রুত লেন পরিবর্তন করে, ইন্ডিকেটর লাইটও নেই
আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রাইভেটকারের চালক মইনুল হাসান বলেন, রিকশা হঠাৎ ব্রেক করে দাঁড়িয়ে গেলে বা উল্টো দিক থেকে এলে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই। গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, এরা খুব দ্রুত লেন পরিবর্তন করে। আবার এদের ইন্ডিকেটর লাইটও নেই। হঠাৎ করে সড়কের পাশ থেকে মাঝখানে চলে আসে। প্রায় প্রতিদিনই মনে হয় দুর্ঘটনা ঘটবে।
প্রাইভেটকারের চালক বাচ্চু মিয়া বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রতিদিন আমাকে অন্তত ২০–২৫ মিনিট বেশি সময় রাস্তায় কাটাতে হয়। এই রিকশার কারণে আমাদের জীবনই দুঃসহ হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে আমার গাড়ির সামনের অংশে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা এসে ধাক্কা মারে। ক্ষতি বেশি হয়নি, কিন্তু কয়েক হাজার টাকা খরচ গেছে। রাতের বেলা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ি। কারণ, তখন এরা কোনো লাইটই জ্বালায় না।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার চিত্র আরও ভয়াবহ। ব্যাটারিচালিত রিকশা যেন প্রতিদিন অফিসগামী যাত্রীদের যানজটের দুর্ভোগে পড়ার মূল কারণ। সরেজমিনে খিলক্ষেত বাজার ও আশপাশের রাস্তায় সারি সারি ব্যাটারিচালিত রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা এবং উল্টো পথে প্রবেশ করা এদের নিত্যদিনের কাজ।
স্থানীয় পথচারী আফরোজা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তা পার হতে গেলেই মনে হয় কখন যেন ধাক্কা দেয়। ব্যাটারিচালিত রিকশার শব্দ কম, হঠাৎ সামনে চলে আসে।
মোটরসাইকেলের আরোহীরাও অভিযোগ করেন, এরা এমনভাবে মোড় নেয় যে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রেক কষতেই হয়।
বাড্ডা এলাকার নদ্দা-কালাচাঁদপুর সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, সংযোগ সড়কের মাঝেই যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে এসব রিকশা। এতে প্রাইভেট কার, বাস ও সিএনজি অটোরিকশা আটকে পড়ে এবং দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

সিএনজি চালক হুমায়ুন কবির জানান, আগে এই এলাকায় ছোট দূরত্বের যাত্রীরা আমাদেরই নিত। এখন সবাই ব্যাটারিচালিত রিকশায় যায়। কারণ, ভাড়া কম ও সুবিধাজনক। এতে আমাদের আয় অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।
মিরপুরের চিত্রও একই রকম। মিরপুর ১ থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত সব সড়কেই ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল লক্ষ করা যায়। শুধু গলিপথ নয়, প্রধান সড়কেও তারা অবলীলায় চলাচল করছে।
মোটরসাইকেলের আরোহী রাজীব হোসেন বলেন, আইন অমান্য করে চলা এসব রিকশা এখন পথচারী থেকে শুরু করে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও গণপরিবহনের চালকদের জন্য নতুন আতঙ্কের নাম। এদের গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিধি নেই, সিগন্যাল বা লেনের নিয়ম মানার তো প্রশ্নই আসে না। প্রতিদিন অন্তত একবার এমন হয়, যখন ব্যাটারিচালিত রিকশার হঠাৎ ব্রেক কষায় আমি পড়ে যেতে বসি। এদের গতির নিয়ন্ত্রণ নেই, নিয়মের তোয়াক্কাও করে না।
আরও পড়ুন
নিউমার্কেট এলাকার চিত্র যেন আরও ভয়াবহ
সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় নিউমার্কেট এলাকায়। এখানে প্রতিদিন হাজারও মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও ব্যাপক যাতায়াত থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশই দখল করে রেখেছে ব্যাটারিচালিত রিকশার সারি। যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা চলছে অবিরাম। উল্টো দিক দিয়ে আসা, মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়া কিংবা সংকীর্ণ জায়গায় জোর করে প্রবেশ— সবই এখানে নিত্যদিনের দৃশ্য। ফলে নিউমার্কেট-ধানমন্ডি-আজিমপুর রুটে যানজট কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থা নিয়ে দোকানদারেরাও ক্ষুব্ধ। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ক্রেতারা এসে গাড়ি পার্কিং করতে পারেন না। রাস্তায় রিকশার চাপ এত বেশি যে মানুষ ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না। মহাসড়কে দ্রুতগতির বাস-ট্রাকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা বা উড়াল সড়কের ওপরে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা— সবই নির্বিঘ্নে করছে চালকেরা। ফলে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, আহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে সড়কে দায়িত্বপালন করা স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (ট্রাফিক বিভাগ) সদস্যরা বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা জানান। কারণ, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার বেপরোয়া চলাচল ঠেকাতে মাঠপর্যায়ে নানা পদক্ষেপ নিলেও খুব একটা সুফল পাচ্ছেন না তারা। এ বিষয়ে অন্তত ১০ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, নিয়মিত অভিযানে ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার তা রাস্তায় ফিরে আসে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, মূল সড়ক কিংবা মহাসড়কে এই যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও প্রায়শই তারা দেখছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে নির্দ্বিধায় গলিপথ থেকে মূল সড়কে উঠে আসছে। এতে গাড়িচালকদের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
একজন ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টের ভাষ্য, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। কিন্তু সমস্যা হলো— এই রিকশাগুলো হুট করেই আবার চলে আসে। অনেক সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুপারিশও থাকে। ফলে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’

আরেকজন সার্জেন্ট হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এখানে মূল সমস্যা হলো নিয়ন্ত্রণ। আমরা চাইলে আজকেই সব রিকশা উঠিয়ে দিতে পারি, কিন্তু আগামীকাল আবার দেখা যাবে আরও বেশি রিকশা সড়কে নেমেছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া কেবল অভিযান চালিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রতিদিন অন্তত ডজনখানেক ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করি। কিন্তু মালিকেরা অল্প কিছু টাকা জরিমানা দিয়ে আবারও রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমছে না, আবার আমাদের প্রচেষ্টাও স্থায়ী হচ্ছে না।
উত্তরায় দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মাঝেমধ্যে দেখতে পাই উড়ালসড়কেও নির্বিঘ্নে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। যাত্রীরা সস্তায় ভাড়া পেয়ে চড়ছেন, চালকেরাও স্বল্প বিনিয়োগে ভালো আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু এই যানবাহন চালাতে কোনো লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। ফলে চালকেরা ট্রাফিক আইন মানছেন না, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে দিনদিন।
রিকশা গলির ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছি : ডিসি ট্রাফিক
ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বিশেষ করে উত্তরার প্রধান সড়কগুলোতে এর প্রভাব ঠেকাতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তরা বিভাগ) মো. আনোয়ার সাঈদ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডাম্পিং করার সুযোগ থাকলে গাড়ি আটকাই, ব্যাটারি খুলে রেখে নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দিই। অনেক সময় সরাসরি রাস্তায় আটকে রাখি। এগুলো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলেও খুব বেশি কার্যকর হচ্ছিল না। তাই বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে মালিক ও চালকদের নিয়ে বসেছিলাম।
‘বৈঠকে ওদেরকে (ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক ও চালক) বলেছি, মূল সড়কে ওঠা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশেষ করে খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অংশে কোনোভাবেই আসতে পারবে না। এজন্য আমরা ১০টি পয়েন্ট নির্ধারণ করেছি। প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক সদস্য থাকে, সঙ্গে থাকে আরও কিছু লোক। এভাবে রিকশাগুলোকে গলিপথেই ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
‘এই পদ্ধতিতে আমরা মূল সড়কে কিছুটা সুফল পাচ্ছি। বিশেষ করে পিক আওয়ারে আমি নিজে এবং আমার এসি-ডিসিরা মনিটরিং করে। তখন ব্যাটারিচালিত রিকশার উপস্থিতি তুলনামূলক কমে আসে। তবে, চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে।’
আনোয়ার সাঈদ বলেন, লোকবল সবসময় সমানভাবে দেওয়া যায় না। তাই নিয়মিত চাপ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে গলির ভেতরে এখনো রিকশার চলাচল রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব তাদের ভেতরের সড়কে সীমাবদ্ধ রাখতে। এ প্রস্তাব ইতোমধ্যে ডিএমপির বৈঠকেও উত্থাপন করা হয়েছে।
‘আমি স্যারদের কাছে বলেছি, অন্য ডিভিশনেও একই কায়দায় ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা দেখতে। আমাদের অভিজ্ঞতা ইতিবাচক, এখন অন্যরা কতটা করতে পারছে সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। আমরা চেষ্টা করছি উত্তরার প্রধান সড়কগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে। ধীরে ধীরে আরও ভালো ফল আসবে বলে আশা করছি।’

উৎপাদন বন্ধ ও চার্জিং স্টেশনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল শুধু সড়কে অরাজকতা তৈরি করছে না, বরং পুরো শহরের পরিবহন ব্যবস্থায় একধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তাদের মতে, এই বাহনগুলো মূলত গলিপথে চলাচলের জন্য উপযোগী। অথচ তারা এখন মহাসড়ক থেকে উড়ালসড়ক— সব জায়গায় অবাধে দাপট দেখাচ্ছে। এতে দ্রুতগামী গাড়ি ও গণপরিবহনকে বারবার হঠাৎ করে থামতে হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং যানচলাচলের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যাত্রীদের সস্তা ও সহজলভ্য সেবা দেওয়ার কথা বলে ব্যাটারিচালিত রিকশা অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এর কোনো নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নেই। ফলে চালকেরা নিয়ম না মেনে যেভাবে-সেভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। ফলে শুধু পথচারী নয়, প্রাইভেটকার থেকে শুরু করে বাসচালকেরাও আতঙ্কে থাকেন।
আরও পড়ুন
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে শহরের সব জায়গায় ব্যাটারিচালিত রিকশার আধিক্য লক্ষ করা গেছে, যা একাধিক দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে।
‘প্রকৃতপক্ষে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এখন প্রায় অসম্ভব পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে, এটাকে মোকাবিলার জন্য কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। সর্বপ্রথম ব্যাটারিচালিত রিকশার নতুন উৎপাদন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, চার্জিং স্টেশনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা এবং নতুন ডিজাইনের রিকশাগুলোতে আরও নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরি।’
তার মতে, বর্তমানে এই রিকশাগুলোতে ব্যবহৃত ব্যাটারি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উচ্চগতিতে চলাচল করে। যদি গতির সীমা কমানো যায় বা সৌরপ্যানেল ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা সীমিত করা, নিরাপদ নকশা ব্যবহার করা এবং নিয়মিত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালানো হলে যাত্রী ও পথচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতভাবে বাড়বে। এর মাধ্যমে শহরের পরিবহন ব্যবস্থা আরও নিরাপদ হবে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।
আরএইচটি/এমজে/এমএআর/
