আ.লীগ-বিএনপি থেকে প্রত্যাখ্যাত নাজমুল হুদা এখন ‘ঘরবন্দি’
বিএনপি থেকে হয়েছেন বহিষ্কার। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাছে পাননি পাত্তা। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অনেকটা অসহায় অবস্থায় আছেন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। করোনা মহামারির এ সময় ঘরবন্দি অবস্থায় আছেন তিনি। টেলিভিশন দেখে আর গান শুনে সময় পার হচ্ছে ডাকসাইটের এ নেতার। তবে, করোনার সংক্রমণ কেটে গেলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের দল গোছানোর ইচ্ছা ‘তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান নাজমুল হুদার।
বিজ্ঞাপন
দলের স্বার্থ ও শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০১০ সালে বিএনপির ‘ভাইস চেয়ারম্যান’ ও ‘প্রাথমিক সদস্য পদ’ থেকে নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামের একটি দল গঠন করেন। কিন্তু ২০১৩ সালে সেই দল থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। বেশ কিছুদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকেন। পরে সাবেক দল বিএনপির নামের সঙ্গে মিল রেখে গঠন করেন ‘তৃণমূল বিএনপি’। কিন্তু দলটির নিবন্ধন সুপ্রিম কোর্টের আপিল ডিভিশনে আটকে যায়। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব বেশকিছু দল নিয়ে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালাইন্স’ নামের জোট গঠন করেন। সেই জোটের ব্যানারে ঢাকা-১৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন। ফলে, নির্বাচনের পর রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যান নাজমুল হুদা।
বিজ্ঞাপন
কীভাবে দিন পার করছেন— জানতে চাইলে নাজমুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রাজনীতি তো আর নেই। রাজনীতি করার উপায়ও নেই। কাজেই ঘরে বসে অধিকাংশ সময় কাটাই। মেয়েরা কোনো অবস্থাতেই বাইরে যেতে দিতে চায় না। কারণ, বয়স হয়েছে। আবার করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের মধ্যে আছে, সংক্রমণও বাড়ছে। সারাদিন ঘরবন্দি হয়ে টেলিভিশন দেখা, গান শোনা, ঘরে বসে কিছু কাজ করা— এসব নিয়ে আছি আরকি।’
আগামীতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মুখাপেক্ষী হবেন কি না— জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি মনে করি, এখন রাজনীতিতে একটা বড় মেরুকরণ হচ্ছে। আগামীতে জোটের রাজনীতি খুব বেশি থাকবে না। কারণ, যে যার মতো করে দল গোছাচ্ছে। আওয়ামী লীগ আগামীতে এককভাবে নির্বাচন করবে। ১৪ দলীয় জোটকে খুব বেশি পাত্তা দেবে বলে মনে হয় না। কাজেই তাদের মুখাপেক্ষী থাকার প্রশ্ন আসে না।
বিজ্ঞাপন
সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই দলীয় লোক মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। জোটের কাউকে হয়ত পাত্তা দেবে না। রাশেদ খান মেনন (ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি) যদি আওয়ামী লীগে নাম লেখান তাহলে হয়ত তিনি পেতে পারেন। অন্যথায় কাউকে দেবে কি না— সেটা আমার ধারণার বাইরে।
‘বিএনপিও ২০ দলীয় জোটের বাইরে গিয়ে নিজ দলকে শক্তিশালী করছে। জোট নয়, নিজেদের ঘর গোছানোর দিকে তারা মনোযোগী। ফলে, আগামীতে তাদের কাছেও জোটের রাজনীতি খুব বেশি গুরুত্ব পাবে বলে মনে হয় না।’
‘ক্ষমতার দাপটে শক্তিশালী বিএনপিকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ’— এমন অভিযোগ তুলে নাজমুল হুদা বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষমতার দাপটে একটি দলকে আপনি নিঃস্ব করে দেবেন, এটা তো হতে পারে না!
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালাইন্সে যারা ছিলেন, তারা এখনও আমার সঙ্গে আছেন। গত নির্বাচনের আগে তারা বিভিন্ন দল ও জোটের কাছ থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। এরপর এলোমেলো হয়ে যান তারা। এখন সবাই আমাকে চাপ দিচ্ছেন যেন জোটকে আবার সক্রিয় করি। ভবিষ্যতে নির্বাচন করলে জোটের দলগুলোকে নিয়েই করব। এর নেতৃত্বে থাকবে আমার তৃণমূল বিএনপি।
তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিষয়টি ঝুলে আছে। হাইকোর্ট থেকে আমার পক্ষে রায় এসেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আপিল বিভাগে যায়। এখন সেখানেই পড়ে আছে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (নির্বাচন কমিশন) কাজ হওয়া উচিত নিবন্ধিত দল ঠিক মতো চাঁদা দিচ্ছে কি না। আপনি রাজনীতি করার যোগ্য কি না— সেটি তো সরকারি ওই চার কর্মকর্তা ঠিক করতে পারেন না! কিন্তু আজ ইচ্ছা মতো তারা (ইসি) একটি দলকে রিজেক্ট (বাতিল) করে দেয়; এই করে... সেই করে। একজন রাজনীতিবিদের ভবিষ্যৎ মূল্যায়নের আপনি কে?’
এদিকে, বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামীতে নাজমুল হুদাকে দলে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কারণ, ইতোমধ্যে তিনি ‘পল্টিবাজ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তবে তার মেয়ে অন্তরা সেলিমা হুদার বিষয়ে দলের শীর্ষপর্যায়ে ইতিবাচক মনোভাব আছে। সে কারণে গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন ফরম চাইলে তাকে দেওয়া হয়। যদিও দল থেকে তাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বর্তমানে তিনি এ আসনে নিজের মতো করে কাজ করছেন। আগামীতে বিএনপির মনোনয়ন চাইলে তাকে দেওয়া হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাজমুল হুদা বিভিন্ন সময় খালেদা জিয়া ও তার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারেক রহমানকে নিয়েও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কথা বলেন। একাদশ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এমন একজন ‘পল্টিবাজ’ নেতাকে দলে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নই আসে না।
ওই নেতা আরও বলেন, এটা সত্য যে নাজমুল হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছিলেন। এ কারণে তার মেয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইলে তাকে সুযোগ দেওয়া হবে। তার সঙ্গে দলের নেতাদেরও যোগাযোগ আছে। ঢাকা-১ আসন থেকে নাজমুল হুদা এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, মন্ত্রীও হন। সেখানে তাদের বেশ প্রভাব আছে। আগামীতে অন্তরা সেলিমা হুদা চাইলে সেখানে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এ প্রসঙ্গে নাজমুল হুদা বলেন, বিএনপির অনেক কিছুর শুরু আমার হাত ধরে। এ দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমি ছিলাম। এটিকে ছেড়ে দেওয়া অত সহজ নয়। তবে, আগামীর বিষয়টি আগামীতে দেখা যাবে।
এএইচআর/এমএআর/