প্রতি মিটার নদীতীর সংরক্ষণে ব্যয় সাড়ে ১২ লাখ টাকা
নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যা। ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতি বছর দেশের বহু আবাদি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন অনেকে।
দেশে বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন প্রকট আকার ধারণ করে। তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সারা বছরই বিভিন্ন এলাকা নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। যার ধারাবাহিকতায় ভোলার দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার চকিঘাট, হাকিমুদ্দিন বাজার ও লঞ্চঘাট এলাকায় নদীভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে।
এসব এলাকায় ৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার সম্পদ ভাঙন থেকে রক্ষায় একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটিতে মিটারপ্রতি সাড়ে ১২ লাখ টাকা ব্যয় চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার দৌলতখান পৌরসভা ও চকিঘাট এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মেঘনা নদীর ভাঙন হতে রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৫ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ করা হবে। এর মধ্যে নদীতীর সংরক্ষণ কাজ করা হবে ২ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার, নদীতীর সংরক্ষণ কাজ শক্তিশালীকরণ করা হবে ২ দশমিক শূন্য ২ কিলোমিটার এবং নদীতীর সংরক্ষণ পুনর্বাসন কাজ করা হবে শূন্য দশমিক ৬৯ কিলোমিটার।
প্রকল্পটির ওপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয় শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ডিপিপি সংশোধন করে ফের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
এ কে এম আবুল কালাম আজাদ
প্রকল্প প্রস্তাবনায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা প্রয়োজন বলে ডিপিপিতে উল্লেখ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর প্রকল্পটি চলতি বছরের অক্টোবর থেকে জুন ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে পিইসি সভার কার্যপত্রে প্রকল্পটির অনেক খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। তাতে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কীভাবে অর্থায়ন করা হবে সে বিষয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ বাবদ মোট ৩৫১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার (প্রতি মিটার ১২.৩৮ লাখ টাকা) সংস্থান রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নদীতীর সংরক্ষণ কাজের যৌক্তিকতাসহ ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে বিস্তারিত জানাতে হবে।
এছাড়া নদীতীর সংরক্ষণ কাজের চেইনেজ, স্থান, নকশা এবং এ কাজে ব্যবহৃত উপাদানের বিস্তারিত ডিপিপিতে উল্লেখসহ এ জাতীয় চলমান অন্যান্য প্রকল্পের মতো এ খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২.০২ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ শক্তিশালী করতে ১৫২.৩৭ কোটি টাকার (প্রতি মিটার ৭.৫৪ লাখ টাকা) সংস্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া ৬৯০ মিটার নদীতীর সংরক্ষণে ১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার (প্রতি মিটার ২.০৬ লাখ টাকা) সংস্থান রাখা হয়েছে। এ বিষয়গুলোও যৌক্তিকভাবে ব্যয় প্রাক্কলন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ৫০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নিয়ম থাকলেও এ প্রকল্পে তা করা হয়নি বলে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপ্রধান এ কে এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্পটির ওপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের ব্যয় শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ডিপিপি সংশোধন করে ফের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
বিভাগের প্রধান মতিউর রহমান বলেন, জায়গা ভেদে প্রকল্পের ব্যয় লাখ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তারপরও আমরা পিইসি সভায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিটি খাতের বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা করেছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ডিপিপি সংশোধন করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
এসআর/জেডএস/এমএআর