যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া, কারও পক্ষেই যাবে না ঢাকা
ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে বিপুলসংখ্যক রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা চলছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলমান ইউক্রেন সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এরই মধ্যে এ সংকট নিয়ে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াশিংটন ও মস্কো যার যার অবস্থান ঢাকা-কে জানিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বলছে, ইউক্রেন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে কোনো পক্ষকেই আলাদা করে সমর্থন করা হবে না। ঢাকা চাইছে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক।
ইউক্রেন সংকটের মূল কারণ ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল নিয়ে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে। ইউক্রেন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ থাকাকালে প্রায় ২০০ বছর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল ক্রিমিয়া। কিন্তু সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ভেঙে যাবার পর ক্রিমিয়ার মালিকানা দেওয়া হয় ইউক্রেনকে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার দেশে ফিরে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানিয়ে ডিমারশে লেটার (ইউক্রেন পরিস্থিতির বিস্তারিত শেয়ার করে নোট) দেয় ঢাকাকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (ঢাকা) জানুয়ারি মাসের শুরুর দিন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঢাকার অবস্থান জানতে চান।
অন্যদিকে, ঢাকায় নিযুক্ত মস্কোর রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ম্যানটিটস্কিও জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে পররাষ্ট্র সচিবকে ইউক্রেন নিয়ে তাদের অবস্থান জানান। ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিও ইউক্রেন নিয়ে তাদের অবস্থান পররাষ্ট্র সচিবকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বা ইইউ যার যার অবস্থান আমাদের জানিয়েছে। ভালো কিছু মনে হচ্ছে। আসলে বিষয়টা হচ্ছে, ওরা পরোক্ষভাবে আমাদের কাছে কিছু শুনতে চায়। আমরা কোন দিকে? আসলে, আমরা তো স্বাধীনতার পর থেকে নিরপেক্ষ। আমরা নিরপেক্ষ অবস্থানে আছি। আমাদের সচিব মহোদয় তাদের জানিয়েছেন, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় ঢাকা।
ইউক্রেন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে কোনো পক্ষকেই আলাদা করে সমর্থন করা হবে না। ঢাকা চাইছে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক
ইউক্রেন নিয়ে ঢাকার অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া, যার যার অবস্থান আমাদের জানিয়েছে। আমরা শুনতেছি, এ পর্যন্তই। আমরা অত শক্তিশালী দেশ না যে, এ সম্পর্কে হ্যাঁ বা না কিছু করতে (বলতে) পারব। আমরা শুধু শুনতেছি। যারা এটা নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি করছেন, তারা শক্তিশালী দেশ। আমরা এ পক্ষে-সে পক্ষে যেতে ভয় পাই। সুতরাং আমরা চুপ করে আছি।’
‘আমরা কোনো পক্ষেই যাচ্ছি না। তবে আমরা আশা করব, আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে যেন নিষ্পত্তিটা হয়। আমরা সবসময় শান্তিপ্রিয়। আমরা শান্তি চাই।’
গত মঙ্গলবার ইউক্রেন ইস্যুতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেন সমস্যার সমাধান কেবল সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। বাংলাদেশ তাই সংলাপ ও সহযোগিতার চেতনা সমুন্নত রেখে এ সংকট নিরসনে সবপক্ষকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানায়।
গত বছর থেকে ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশ করছে ক্রেমলিন। ইউক্রেনকে ঘিরে রুশ সামরিক মহড়াও জোরদার করা হয়েছে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলোর আশঙ্কা, ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করছে মস্কো। তবে, এমন উদ্দেশ্য নেই বলে মস্কোর পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র মস্কোকে যুদ্ধে নামানোর চেষ্টা করছে— মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এমন মন্তব্যের পর বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপে অতিরিক্ত সেনা পাঠাবে দেশটি। চলতি সপ্তাহে এ সেনা মোতায়েন করা হবে।
অবশ্য ওয়াশিংটনের ইউরোপে অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি আরও কঠিন করে তুলবে। এটি সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগও কমিয়ে দেবে।
মূলত, ইউক্রেন সংকটের মূল কারণ ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল নিয়ে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে। ইউক্রেন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ থাকাকালে প্রায় ২০০ বছর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল ক্রিমিয়া। কিন্তু সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ভেঙে যাবার পর ক্রিমিয়ার মালিকানা দেওয়া হয় ইউক্রেনকে।
সোভিয়েত থেকে বেরিয়ে ইউক্রেন স্বতন্ত্র দেশ গঠন করলেও দেশটিতে দুটি মতাদর্শী শিবির গড়ে ওঠে। একটি শিবিরে জাতিগত রুশ, যারা সবসময় রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছে। বাকিরা ইউরোপসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছে। পশ্চিমারা চায়, ইউক্রেন ইইউ ও ন্যাটোভুক্ত হোক। কিন্তু রাশিয়া কোনোভাবেই চায় না ইউক্রেন ন্যাটোতে যুক্ত হোক।
এনআই/এমএআর/