গুলিবিদ্ধ ভুবনের অবস্থার অবনতি, চিকিৎসায় সহযোগিতা চান স্ত্রী
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র শীলের (৫২) শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। ঘটনার চার দিন পরও ভুবনের জ্ঞান ফেরেনি। এ অবস্থায় অনেকটাই ভিত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তার পরিবার।
এদিকে ব্যয়বহুল এ চিকিৎসার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে ভুবনের পরিবার। এ অবস্থায় তার স্ত্রী সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডি পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুবন চন্দ্র শীলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভুবনের শ্যালক পলাশ চন্দ্র শীল ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছুক্ষণ আগেই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হলো, তিনি জানালেন রোগীর অবস্থা ভালো না। দিনদিন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমরা শেষ একটা চেষ্টা করতে পারি, সেটি হলো অপারেশন। কিন্তু এই অপারেশন কতটা সাকসেসফুল হবে, সেটা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। আমি নিজেও আইসিইউতে গিয়ে দেখে এসেছি, লাইফ সাপোর্টে নিথর দেহটা পড়ে আছে।
চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন চিন্তা করছি কি করব। যদি অপারেশন করাতে হয় তাহলে তো বড় ধরনের একটা অর্থনৈতিক বিষয় সামনে চলে আসে। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখানে অপারেশন করাতে আরও অনেক টাকা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন : বার থেকে ফেরার পথে প্রাইভেটকার থামিয়ে গুলি, পথচারী গুলিবিদ্ধ
‘আমরা চেষ্টা করছি নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে অপারেশনটা করা যায় কি না। সেখানে আমরা খোঁজ নিয়েছি কিন্তু আইসিইউতে সিট খালি নেই। আমরা সরকারি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
গুলিবিদ্ধের ঘটনা কীভাবে কী হয়েছিল– জানতে চাইলে পলাশ চন্দ্র বলেন, আমি দুর্ঘটনার খবর শুনে ঢাকা মেডিকেলে ছুটে আসি। পরে জানতে পারি যে, ওনি গুলিবিদ্ধ। তিনি তখন অফিস থেকে ফিরছিলেন। একজন মানুষ রাস্তা দিয়ে চলাচলরত অবস্থায় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে যাবেন, এটা কেমন কথা?
ভুবনের শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্ত্রী রত্না রানী শীল বলেন, আজ চার দিন হয়ে গেল তার এ অবস্থা, তার কোনো রেসপন্স এখনো পাচ্ছি না। সকালে ডাক্তার এসেছিল, বলেছে তার অবস্থার কোনো উন্নতি নেই, বরং আরও অবনতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি জানতাম না কি হয়েছিল, রাতে সাড়ে ৯টার দিকে তার ভাগনে আমাকে ফোন করে জানিয়েছে যে তার মামা এক্সিডেন্ট করেছে। তখনো আমি জানি না তার শরীরে গুলি লেগেছে। এরপর হাসপাতালে গিয়ে দেখি তার এ অবস্থা।
আরও পড়ুন : তেজগাঁওয়ে গুলির ঘটনায় সন্ত্রাসী ইমনের হাত রয়েছে : ডিবি
রত্না রানী আরও বলেন, একটা মানুষ অফিস থেকে বাসায় ফিরছে, পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন তার অবস্থা সংকটাপন্ন। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, কেনই বা আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছে– এসবের কোনো উত্তর নেই। এমনকি এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আইনের আওতায়ও আনা হয়নি। এটাই তো বাংলাদেশ, এই দেশ সম্পর্কে কী আর বলব, আপনাদের অবশ্যই ভালো ধারণা আছে।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার পেছনে ৪ লাখের মতো খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তার অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। যদি অপারেশন করানো হয় তাহলে অন্তত আরও ৪ থেকে ৫ লাখের মতো লেগে যাবে। এখন পর্যন্ত কষ্ট করে হলেও পারিবারিকভাবেই সব ম্যানেজ করছি। এই যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল, এখন পর্যন্ত কেউ এসে আমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি।
ভুবনের স্ত্রী আরও বলেন, আমি সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। পাশাপাশি আমি চাই আমার স্বামীর চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিক, কারণ আমার স্বামী তো কোনো অপরাধী নয়। অফিস থেকে বাসায় আসার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এর দায় অবশ্যই রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।
জানা গেছে, ভুবন চন্দ্র শীল পপুলার হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক ডা. উজ্জ্বল কুমার মল্লিকের অধীনে ভর্তি আছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
ভুবনের চিকিৎসা ও শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমি আজ সকালে তাকে দেখে এসেছি। শারীরিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়েছে– এমনটি বলা যাবে না। এখনো সে ঝুঁকিতেই রয়ে গেছে। হয়ত তার খুব দ্রুত অপারেশন লাগতে পারে।
তিনি বলেন, এখনো তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি। মাথার জখম ও মস্তিষ্কের অবস্থা জানতে তার সিটি স্ক্যানও করানো হয়েছে।
গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে তেজগাঁও শিল্প এলাকার বিজি প্রেসের সামনের রাস্তায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ ওরফে মামুনের প্রাইভেট কার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে একদল সন্ত্রাসী। সেই সময় ওই পথে মোটরসাইকেলে থাকা ভুবন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ভুবনকে প্রথমে শমরিতা হাসপাতালে, পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর রাত দেড়টার দিকে ভুবনকে পপুলার হাসপাতালে স্থানান্তর করেন স্বজনরা। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
/টিআই/এসএসএইচ/