৩ ঘণ্টায়ও নমুনা দেওয়া হয়নি

বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. শাকিব। সকাল সাড়ে ৮টায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা দিতে এসেছেন। ঘড়ির কাঁটা বেলা পৌনে ১১টায় পৌঁছালেও নমুনা দিতে পারেননি তিনি। কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো বসে অপেক্ষা করছেন করোনার নমুনা দেওয়ার জন্য।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে এমন চিত্র দেখা যায় রাজধানীর উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের করোনা নমুনা সংগ্রহের বুথের সামনে। শুধু শাকিব নয়, রমজানে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে এসে এমন দুর্ভোগে পড়েছেন যুবক-বৃদ্ধসহ অর্ধশতাধিকের বেশি মানুষ। অনেকক্ষণ ধরে সেবা না পেয়ে করছেন নানান অভিযোগ।
দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকেই কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে কাজ করছে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসায় হাসপাতালটির বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। ভাইরাসের আক্রমণে জীবন মরণ লড়াইয়ে এমন বাড়তি হয়রানি যেন কিছুতেই মানতে পারছেন না এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মানুষরা।
শাকিব বলেন, নমুনা দেওয়ার জন্য কোথাও ফাঁকা না পেয়ে পরিবহন বন্ধ থাকার মধ্যেও মিরপুর-২ থেকে এখানে এসেছি। আমাকে সকাল সাড়ে ৮টায় সময় দেওয়া হয়েছিল। সঠিক সময়ে এসে টোকেনও কেটেছি। কিন্তু এখনও নমুনা দিতে পারিনি। এমন পরিস্থিতির সমাধান হওয়া দরকার।

‘মৃত্যুর আগেই মরে যাচ্ছে রোগীরা’ মন্তব্য করে নমুনা দিতে আসা যুবক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমরা যুবকরা না হয় কষ্ট করে অপেক্ষা করছি। কিন্তু যারা বয়োজ্যেষ্ঠ? তারা কীভাবে এতো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করবেন।
খালিদ হোসেন, কবির বকুলসহ অনেকেই জানান, করোনা একজনের কাছ থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব, সেবা নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়াই ভালো। কিন্তু এখানে বিষয়টি উল্টো। এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের আনা নেওয়ার জন্য আলাদা কোনো রাস্তা নেই। সাধারণ মানুষ যেখানে অপেক্ষা করে, সেখান দিয়েই করোনা রোগী আনা-নেওয়া হচ্ছে। কেউ মারা গেলেও এখান দিয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার এখানেই নমুনা নেওয়ার ব্যবস্থা। এত অব্যবস্থাপনা কীভাবে হয় একটি সরকারি হাসপাতালে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিকজন এ প্রতিবেদকে বলেন, ভেতরে অনেকের নমুনা নেওয়া হচ্ছে। তারা আনসার সদস্যসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে নমুনা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা সে পদ্ধতিটা বুঝতে পারছি না। কাকে ধরবো সেটাও বুঝতে পারছি না। আমাদের বলুক যে টাকা লাগবে। আমরা দিতে রাজি আছি, তারপরও সেবাটি দ্রুত দেওয়া হোক।

ভুক্তভোগীরা উল্লেখ করেন, করোনাকালীন এমন অব্যবস্থাপনা খুবই হতাশাজনক। হাসপাতাল দুর্ভোগের জায়গা নয়। এখানে সবাই সেবা পেতে আসেন। সেবার পরিবর্তে যদি এমন দুর্ভোগ পোহাতে হলে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
বিষয়ে অস্বীকার করে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ডা. মোহাম্মাদ শিহাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের সকালে পরীক্ষা শুরু হয়। এ কারণে আউটডোরে থাকা রোগীদের নমুনা নিতে দেরি হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে নমুনা নিতে দেরি করা হয়, বিষয়টা এমন নয়।
শনিবার সকাল থেকেই করোনার নমুনা দিতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সী সবাই অনেকেই। সেখানে ছিল না পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা। সবার চোখে মুখে যেন উৎকণ্ঠা। নমুনা দিয়ে বাড়ি ফিরতেই পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। অনেকেই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে চাচ্ছেন, নমুনা সংগ্রহ করা কখন শুরু হবে। কিন্তু কেউ তাদের সদুত্তর দিতে পারেননা। সবশেষে বেলা ১১টার দিকে নমুনা নেওয়া শুরু হয়।
একে/এমএইচএস
