ঘূর্ণিঝড় রেমালে প্রায় ৩৬ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য অনুযায়ী, হাজার হাজার শিশু এবং তাদের পরিবার বিভিন্নভাবে এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ মানুষ, যার মধ্যে প্রায় ৩৬ লাখ শিশু। যাদের এই মুহূর্তে জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সেভ দ্য চিলড্রেন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত রোববার ভারী বৃষ্টিপাত হয় এবং সোমবার পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঝড়ের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রায় ৮ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আটকা পড়েছে। এই অবস্থায় সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের একটি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দলসহ মোট চারটি দল পটুয়াখালী, বরগুনা ও সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আক্রান্ত মানুষের সহায়তায় কাজ করছে।
আরও বলা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ু সংকটের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। একই সঙ্গে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুযায়ী দেশটি বিশ্বের সপ্তম সর্বাধিক চরম দুর্যোগ ঝুঁকিপ্রবণ দেশ। এখানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার সাময়িক বাস কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে। এখানে অস্থায়ী আবাসগুলো দুর্যোগে টিকে থাকার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। লাগাতার ভারি বৃষ্টিপাতে সেখানে ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন
এসব প্রসঙ্গে সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুমন সেনগুপ্ত বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি আবারও প্রমাণ করে আবহাওয়ার দিক দিয়ে বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে। গত মাসে শিশুরা যেখানে অত্যধিক গরমে কষ্ট পেয়েছে তেমনি এখন তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে জলাবদ্ধতা এবং ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞকে। তাপপ্রবাহের কারণে কিছুদিন আগে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল, এখন সেগুলো আবারও বন্ধ হয়ে গেল জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রের কারণে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ঝড় ও বন্যা মোকাবিলার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সঠিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও আগাম সতর্কতা গ্রহণের মতো সময়োপযোগী পদক্ষেপ। হাজারো স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষটিকেও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছে। ফলে অনেক মূল্যবান জীবন রক্ষা করা গেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা যেভাবে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বিপন্ন হচ্ছে শিশুর জীবন ও অধিকার।
সুমন সেনগুপ্ত বলেন, বিশ্বনেতৃবৃন্দকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই ধরনের বিপর্যয়ের মূল কারণ খুঁজে বের করে তা মোকাবিলার পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী সপ্তাহে জার্মানির বনে বিশ্বের সরকারসমূহ জাতিসংঘের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো শিশু এবং জলবায়ু বিষয়ে ‘বিশেষজ্ঞ সংলাপ’-এ অংশগ্রহণ করবে। সেখানে এই বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে এবং সবাই একে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে বলে আমরা আশা করি।
টিআই/এমজে