কামরাঙ্গীরচরে এক দশকের চিকিৎসা কার্যক্রম সমাপ্ত করছে এমএসএফ

২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে এক দশকেরও বেশি দীর্ঘ সময় ধরে চলা চিকিৎসা কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ)। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ক্রমবর্ধমান মানবিক প্রতিক্রিয়াগুলোর বিশ্বব্যাপী পর্যালোচনার পরে মানবিক এ সংস্থাটি অন্য জায়গায় আরও বেশি গুরুত্বারোপের সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর হোটেল শেরাটনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ২০১০ সাল থেকে কামরাঙ্গীরচরে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছে মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স। প্রাথমিকভাবে শিশু অপুষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে এবং পরে এটি প্রসারিত হয়েছে বিদ্যমান জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অংশের গুরুতর স্বাস্থ্য চাহিদার প্রয়োজনীয়তার ওপর। ২০১৩ সালে সংস্থাটির শিশু অপুষ্টি থেকে কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য (এসআরএইচ), যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (এসজিবিভি) থেকে বেঁচে ফেরাদের যত্ন এবং কারখানার শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য (ওএইচ) পরিষেবা প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করে।
আরও পড়ুন
মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স কামরাঙ্গীরচরের আলী নগর এবং মাদবর বাজারে ক্লিনিক পরিচালনা করেছে। এছাড়াও কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে সহায়তা করেছে। একইসঙ্গে এলাকাজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং অনানুষ্ঠানিক কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার প্রবেশাধিকার উন্নত করতে ও পেশাগত স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আউটরিচ কার্যক্রমও পরিচালনা করেছে।
কামরাঙ্গীরচরে এমএসএফের মেডিকেল টিম লিডার ক্রিস্টাবেল মাইয়েনগা বলেন, গত দশ বছরে, কামরাঙ্গীরচরে এমএসএফের স্বাস্থ্য কর্মসূচি সীমিত অধিকার এবং সুরক্ষাসহ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কর্মরত ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছে, যার মধ্যে ১৪ বছরের কম বয়সী প্রায় ১ হাজার শিশু রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদিও বাংলাদেশে কিছু কর্মক্ষেত্র উন্নত হচ্ছে, তবুও এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশার প্রায় ৮৫ শতাংশ বিপজ্জনক রয়ে গেছে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এমএসএফ কামরাঙ্গীরচরে সেবা প্রদানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জগুলো জনসম্মুখে নিয়ে এসেছে। যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার মানুষদের ক্ষেত্রে সামাজিক অপবাদের ভয় এবং সহায়তা ব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস, সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে এক বড় বাধা তৈরি করে। তা সত্ত্বেও এমএসএফ দল গত ১০ বছরে ১১ হাজার ২৯৫ জন সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করেছে।
ক্রিস্টাবেল মাইয়েনগা বলেন, এমএসএফ যখন কামরাঙ্গীরচরের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখনও প্রকল্পটি কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে সহায়তা অব্যাহত রাখতে একটি ‘বেসিক ইমার্জেন্সি অবস্টেট্রিক অ্যান্ড নিউবর্ন কেয়ার (বিইএমওএনসি)’ চালু করতে সহায়তা করে এবং লজিস্টিক, মানবসম্পদ সহায়তা প্রদান করেছে। এমনকি সবশেষে হাসপাতালের জন্য একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করে।
এমএসএফ কামরাঙ্গীরচর হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ক্রিস্টফ ফ্রিডল বলেন, কামরাঙ্গীরচরে এমএসএফের উপস্থিতি শেষ হলেও আমরা আশা করি অন্যান্য সংস্থাগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে বেঁচে ফেরাদের যত্ন এবং পেশাগত স্বাস্থ্যসেবার বিদ্যমান ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসবে, আমাদের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য ব্যাপক সেবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।
টিআই/এমএ