চিকিৎসকদের ‘ইথিক্যাল প্র্যাকটিস’-এ জোর দেওয়ার আহ্বান

চিকিৎসকদের ইথিক্যাল প্র্যাকটিসের উপর গুরুত্বারোপ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, রোগীদের যথাযথ সময় না দেওয়াও এক ধরনের দুর্নীতি। এসময় তিনি নিজ দলের চিকিৎসকদের বেশি করে নৈতিক চর্চারও নির্দেশনা দেন।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন
ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমি একজন রোগীকে ১০ মিনিট দেখার কথা ছিল, কিন্তু আট মিনিট সময় নিয়ে দেখেছি, এটা নৈতিকতা বিবর্জিত। যদি আরও গভীরভাবে বলি, তাহলে বলবো, এটিই দুর্নীতি।
তিনি বলেন, আমি লন্ডন গিয়েছিলাম চিকিৎসা নেওয়ার জন্য, সেখানে আমার এক ঘণ্টার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। আমি গুছিয়ে কথা বলায় সময় লেগেছে ৩৫-৪০ মিনিট। ডক্টর আমাকে বলেন, আপনার আরো ২০ মিনিট রয়েছে, আপনি চাইলে গল্প করতে পারেন, কারণ পরের রোগী আসবে এক ঘণ্টা পর। সুতরাং একজন রোগী যতটুকু সময় পান, তাকে তা দিতে হবে, তা না হলে নৈতিক চর্চা হলো না।
জামায়াতে ইসলামীর এই কেন্দ্রীয় নেতা আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেককেই ক্ষমতা দখলের অশুভ লড়াই থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দৃষ্টি দিতে হবে সমাজ ও জনকল্যাণে। দেশে ঘটে যাওয়া বিগত কয়েক মাসের কিছু ঘটনা কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যা কাম্য নয়। বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের মাধ্যম। আগামী নির্বাচনে জনগণ দল নয়, মার্কা নয়, যে প্রার্থী সৎ ও যোগ্য তাকেই ভোট দিবেন সেটা আশা করি।
এসময় জুলাই শহীদদের স্মৃতিচারণ করে যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই অনুষ্ঠানে জুলাই যোদ্ধারা সাধারণ কোনো অংশগ্রহণকারী নন। আমরা মনে করি, তারা এই অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি। আমি জুলাই যোদ্ধাদেরকে এই অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ঘোষণা করছি। আপনার শুধু এখানেই সম্মানিত না পুরো জাতির কাছে সম্মানিত।
উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে ডা. তাহের আরও বলেন, পবিত্র রমজান মাস মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাস। পবিত্র এই মাসে মহান স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। নিজেদের আত্মার উন্নতি করতে হবে, নিজেকে আরও বেশি শুদ্ধ করতে হবে। নিজেকে পবিত্র ইসলামের সত্যিকারের অনুসারী করতে হবে এবং অন্যকে সত্যিকারের অনুসারী করে তুলতে হবে। আমাদের আত্মকেন্দ্রীয়তা ভুলে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। এভাবেই নিজেকে তৈরি করতে হবে। আমাদের আত্মকেন্দ্রীয়তা ভুলে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। এভাবেই নিজেকে তৈরি করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মহানবী, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত। পবিত্র কুরআনভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সকল প্রকার অশান্তি থেকে মুক্তি মিলবে, শান্তি ও সাম্যের দেশ ও বিশ্ব গড়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশে যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজ করছে, যারা কুরআনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে, ইসলামকে বিকশিত করার চেষ্টা করেছে তাদের উপর অনেক অত্যাচার হয়েছে, যা সত্যিই অত্যন্ত নির্মম।
তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার। সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তোলার, ন্যায় বিচারের বাংলাদেশ গড়ে তোলার। আমাদেরকে দলের চাইতে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। ইসলামী চেতনাকে ধারণ করে সন্ত্রাসমুক্ত, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা অনেক বড় স্পর্ধা, সেই সুযোগ কারো থাকা উচিত নয়। যদি আমাদের এই আন্দোলনের যোদ্ধাদের কোন ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তাদেরকে আমরা দৃষ্টি আকর্ষণী দিতে পারি, তাদেরকে আমরা বলতে পারি। তাদেরকে ডেকে নিয়ে কথা বলতে পারি। তাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যে চক্রান্ত শুরু হয়েছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন তার বক্তব্যে তাকওয়া দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধা মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভাই ভাই। এ দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের হয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করলে তাদেরকে রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাঁই বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএসএমএমইউর অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন টিটো, অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. হাসনাত আহসান সুমন, বিএসএমএমইউ ভিসির একান্ত সচিব ডা. মো. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব, সহকারী প্রক্টর ডা. মো. আদনান হাসান মাসুদ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ডা. সজীব সরকারের পিতা জনাব আব্দুল হালিম সরকার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জুলাই আন্দোলনে আহত জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
টিআই/এমএসএ