চিকিৎসা ব্যয় কমাতে প্রেসক্রিপশনে কমদামি ওষুধ রাখার আহ্বান

চিকিৎসা ব্যয় কমাতে সুলভমূল্যের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে রাখতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।
তিনি বলেন, চিকিৎসা খরচের অন্যতম বড় অংশ হচ্ছে ওষুধ, তাই আমরা ডাক্তারদের আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় এবং সুলভমূল্যের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করেন।
শনিবার (১০ মে) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব লুপাস দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক শাহিনুল আলম বলেন, বর্তমানে রোগী সেবার ব্যয় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমানে এটি প্রায় ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ সরকারের ২০৩০ সালের মধ্যে লক্ষ্য হল চিকিৎসা খরচের ৭০ শতাংশ রাষ্ট্র বহন করবে এবং ৩০ শতাংশ রোগী বহন করবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি দেখে আমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে, কেন রোগী ব্যয় কমছে না বরং বেড়ে যাচ্ছে?
তিনি বলেন, বিএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও চিকিৎসকরা রয়েছেন, যারা নিয়মিত প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা ও গাইডলাইন অনুসরণ করেন। এটি আমাদের সব চিকিৎসকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনতে সক্ষম হব।
এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগী সেবা প্রদান আরও উন্নত করতে আমাদের টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা উচিত, যা শুধু রোগীদের জন্য উপকারী নয়, এটি দূরবর্তী স্থান থেকে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি সহজতর করবে। এভাবেই আমরা স্বাস্থ্য সেবায় আধুনিক প্রযুক্তির সুফল দিতে পারব।
আরেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, লুপাস একটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং রোগ এবং এর ব্যাপারে আরও গবেষণা চালিয়ে এর কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি। বিএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের জন্য একটি শক্তিশালী গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে আমাদের এখানে লুপাস রোগের সচেতনতা এখনও সীমিত। তাই এ ধরনের দিবস আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা মুহূর্ত, যা সবাইকে এই রোগ সম্পর্কে আরও সচেতন করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লুপাস একটি রহস্যময় রোগ, যা মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশ্বের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী কম বয়সী নারী। তবে, পুরুষদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম।
তাদের মতে, লুপাসের সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে চুল পড়া, মাথাব্যথা, গায়ের ওপর প্রজাপতির পাখার মতো লাল চাকা, চরম ক্লান্তি, জ্বর, মুখে বা নাকে ঘা, গিরায় ব্যথা বা ফোলা এবং রোদ বা আলোতে শরীরের চামড়ায় প্রভাব বা জ্বালাপোড়া। লুপাস রোগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে হার্ট, কিডনি, ব্রেন এবং চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- অধ্যাপক ডা. মো. শামীম আহমেদ (মেডিসিন অনুষদের ডিন), অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান (শিশু অনুষদের ডিন), অধ্যাপক ডা. মো. আবু শাহীন (রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান), অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার, অধ্যাপক ডা. মো. ইমনুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল ইসলাম প্রমুখসহ অন্যান্য বিশিষ্ট শিক্ষক ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
টিআই/এমএন