নিজেদের ভুল-দুর্বলতা চিহ্নিত করতে ‘ক্লিনিক্যাল অডিট’ চালু করলো বিএমইউ

চিকিৎসাসেবার গুণগত মান, স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা এবং মেডিকেল শিক্ষার উন্নয়নে নিজস্ব ভুল ও দুর্বলতা চিহ্নিত করতে ‘ক্লিনিক্যাল অডিট’ চালু করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগীসেবা, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার মান যাচাইয়ে এই অডিট হবে একটি ধারাবাহিক কৌশলগত পদক্ষেপ।
সোমবার (২ জুন) দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ইউনিভার্সিটি স্পেশাল সেমিনারে এই নতুন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
সেমিনারে জানানো হয়, ‘অডিট ফর অ্যাডভান্সমেন্ট : চিকিৎসা মান, শিক্ষা ও সেবার উন্নয়ন’ শীর্ষক এ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএমইউ’র চিকিৎসা ও শিক্ষা বিভাগগুলোর বর্তমান কার্যক্রম পদ্ধতিগতভাবে মূল্যায়ন করা হবে। দুর্বলতা চিহ্নিত করে বাস্তবভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সেবা শুধু দিলেই হবে না, মান নিশ্চিত করতে হবে। মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। রোগীদের প্রতি চিকিৎসক সমাজের প্রতিশ্রুতি হলো— তাদের নিরাপদ ও গুণগত চিকিৎসাসেবা দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সেবা দিতে হলে ক্লিনিক্যাল অডিট অপরিহার্য। এখানে ভুল দেখা মানেই দায়ী করা নয়, বরং মানোন্নয়নের পথ তৈরি করা।
সভাপতির বক্তব্যে বিএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, চিকিৎসাসেবার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনে ক্লিনিক্যাল অডিট একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এটি শুধু একটি প্রশাসনিক চর্চা নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতি—যা আমাদের সব বিভাগে ছড়িয়ে দিতে হবে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ তার উপস্থাপনায় ক্লিনিক্যাল অডিটের ইতিহাস, উদ্দেশ্য, ধরন ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অডিট মানেই শুধুই সমালোচনা নয়, এটি পেশাগত উন্নয়নের পথনির্দেশনা।
উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, এই চর্চাকে স্থায়ী কাঠামোতে রূপ দিতে মেডিক্যাল অডিট সেল গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার বলেন, সেবার ল্যাপস ও গ্যাপ দূর করতে হলে বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে অডিট জরুরি। এটা শুধু চিকিৎসা নয়, সমগ্র ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের চাবিকাঠি।
সেমিনারে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী আলী আফতাব তার প্রবন্ধে একটি ক্লিনিক্যাল অডিট রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল— ‘মেডিক্যাল রেফারেল নোট ক্লিনিক্যাল অডিট : বিএমইউ’র স্বাস্থ্যসেবা সহায়তায় গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশদ মূল্যায়ন।’
তার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগের ১১৩টি রেফারেল নোট পর্যালোচনায় বেশ কিছু ঘাটতি ধরা পড়ে। এর মধ্যে ছিল- রেফারেল নোটে তারিখ ও সময় না থাকা, শারীরিক পরীক্ষার তথ্য অনুপস্থিত, ল্যাব রিপোর্ট সংযুক্ত না করা, পর্যাপ্ত ক্লিনিক্যাল তথ্যের অভাব। এমনকি এই অবস্থার উত্তরণে তিনি বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণসহ একাধিক সুপারিশ তুলে ধরেন।
সেমিনার শেষে আয়োজক কমিটির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পুরো সেশন সঞ্চালনা করেন ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ (মামুন)।
আরও পড়ুন
হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সফি উদ্দিন ‘অডিট ফর অ্যাডভান্সমেন্ট, ইমপ্রুভিং ক্লিনিক্যাল স্ট্যান্ডার্ডস, এডুকেশন অ্যান্ড সার্ভিস অ্যাট বিএমইউ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের কথা বলি, কিন্তু গ্যাপ চিহ্নিত না করলে সেই উন্নয়ন খেয়ালি হয়ে পড়ে। নিয়মিত অডিটই আমাদের উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দেবে।’
টিআই/এমএন