কোলন ক্যানসার : কী খাবেন, কী খাবেন না

ক্যানসার হলে সঠিক পুষ্টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোলন ক্যানসার হলে কী খাবেন এবং কী খাবেন না— তা জানা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি চিকিৎসার ফলাফল ভালো করতে পারে এবং জীবনের গুণমান অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে।
১. চিনি-সমৃদ্ধ খাবার
মিষ্টি, ডেজার্ট, ক্যান্ডি এবং চিনিযুক্ত পানীয়র মতো সহজ শর্করাযুক্ত খাবারে পুষ্টিগুণ খুব কম থাকে। এগুলো ফল, সবজি ও চর্বিহীন প্রোটিনের মতো পুষ্টিকর খাবারের জায়গা নিয়ে নেয়। এ ধরনের খাবার অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়ে, যা কোলন ক্যানসারের একটি বড় ঝুঁকি।
২. স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার
পোর্ক, ভেড়ার মাংস, বাটার এবং নানা প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাকস-জাতীয় খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম খেলে চিকিৎসার ফল ভালো হয়। চিকিৎসকেরা সাধারণত জলপাই তেল বা ক্যানোলা তেলের মতো মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং মাছ, বাদাম, বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাট গ্রহণের পরামর্শ দেন।
৩. ভাজা খাবার
তেলেভাজা এবং ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করে। কেমোথেরাপির সময় বমি, বমি ভাব, ডায়রিয়া ইত্যাদি উপসর্গ বাড়াতে পারে। এই ধরনের চর্বিযুক্ত খাবার পেটে দীর্ঘসময় থেকে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. কার্বোনেটেড পানীয়
ফিজি বা কার্বোনেটেড পানীয়, যেমন সফট ড্রিংক বা কোলা, পেটে গ্যাস, বমি ভাব ইত্যাদি বাড়াতে পারে। এতে থাকা চিনি ও ক্যালোরি শরীরে পুষ্টি দেয় না, বরং ওজন বাড়িয়ে দেয়, যা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. ক্যাফেইন
ক্যাফেইন বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়ায়, যার ফলে গলাব্যথা ও গিলতে অসুবিধা হতে পারে। ক্যাফেইন নিদ্রাহীনতা বাড়াতে পারে, যা কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
৬. অ্যালকোহল
কোলন ক্যানসার থাকলে অ্যালকোহল একেবারেই এড়িয়ে চলা বা খুব কম মাত্রায় গ্রহণ করাই শ্রেয়। এটি ব্যথানাশকসহ অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে এবং গলাব্যথা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, গিলতে অসুবিধা ও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণ হতে পারে।
৭. প্রক্রিয়াজাত মাংস
২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করে, প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। বেকন, কোল্ড কাট, মাংস স্প্রেড ইত্যাদিতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ কোলনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কোলন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর কোলন ইতিমধ্যে সংবেদনশীল, তাই এসব খাবার আরও ক্ষতি করতে পারে।
৮. রোগ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস
ক্যানসার হলে খাদ্যাভ্যাস আরও সচেতনভাবে নির্বাচন করা দরকার। পুষ্টিকর এবং সহজপাচ্য খাবার খেলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে শক্তি জোগাবে।
৯. চিকিৎসকের পরামর্শ
যেকোনো খাদ্যতালিকা তৈরির আগে আপনার চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ ক্যানসার ও কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন ভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা হয়।
১০. গুরুত্ব
কোলন ক্যানসারের রোগীর খাদ্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল খাবার শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং চিকিৎসাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা ও চিকিৎসকের গাইডলাইনের গুরুত্ব অনেক।
এমজে
