ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ফুড ট্যাবু : গর্ভবতী নারীদের খাবারে ‘নিষেধাজ্ঞা’

খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের গর্ভবতী নারীদের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের খাদ্যসম্পর্কিত কুসংস্কার বা ‘ফুড ট্যাবু’।
জানা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে এসব জনগোষ্ঠীর নারীদের অন্তত ৬৪টি পুষ্টিকর খাবার খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়, যেগুলোকে তারা “বিপজ্জনক” মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ধরনের ট্যাবু পুষ্টিহীনতা, রক্তস্বল্পতা, প্রসবজনিত জটিলতা ও নবজাতকের দুর্বলতা বাড়িয়ে তোলে। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিএমইউর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর গর্ভবতী নারীদের ফুড ট্যাবু নিয়ে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডা. লাবন্য ত্রিপুরা।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে ডা. লাবন্য ত্রিপুরা জানান, খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমাদের মধ্যে গর্ভাবস্থায় নানা ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ, ডিম, মাংস, এমনকি কিছু পানীয় এবং হালকা জলখাবার খেতে বাধা দেওয়া হয়। তাদের বিশ্বাস—এসব খাবার গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর, গর্ভপাত বা প্রসবজনিত জটিলতা তৈরি করতে পারে।
“গর্ভবতী মায়ের মা, শাশুড়ি, ননদ বা পারিবারিক বয়োজ্যেষ্ঠরাই এসব ট্যাবু প্রচার ও প্রয়োগ করেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধাত্রী বা দাইও এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখেন,” বলেন ডা. লাবন্য।
তিনি জানান, গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের ৪৬.৬ শতাংশ জানিয়েছেন, গর্ভাবস্থায় তারা এক বা একাধিক পুষ্টিকর খাবার থেকে বিরত ছিলেন শুধুমাত্র সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ট্যাবুর কারণে। অথচ চিকিৎসা ও পুষ্টিবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এইসব খাবার গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান রেখেই এমন স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচি গড়ে তুলতে হবে, যা ট্যাবু ভেঙে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে মায়েদের উদ্বুদ্ধ করবে।”
ট্যাবু দূর না হলে অপুষ্টি দূর হবে না উল্লেখ করে ডা. শাহিনুল আলম আরও বলেন, “একজন গর্ভবতী নারীর খাবার শুধু তার নিজের জন্য নয়, একটি নতুন প্রাণের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের পক্ষ থেকে আরও দুটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রবীণদের অসংক্রামক রোগ ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ সংক্রান্ত আচরণগত বিশ্লেষণ এবং কমিউনিটি পর্যায়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর করণীয়। তিনটি গবেষণাই পরামর্শ দিয়েছে, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও জাতিসত্তার মধ্যে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে হলে তাদের জীবনধারা, ভাষা ও সংস্কৃতি অনুধাবন করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
টিআই/এসএম