রিলস আসক্তি মস্তিষ্কে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে? যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলস দেখে সময় কাটানো তরুণদের এখন বিনোদনের অন্যতম খোরাক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শট ভিডিও দেখে যাচ্ছে সবাই। তবে এই বিনোদন কি আপনার মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে? স্নায়ুবিজ্ঞানীরা রিলস আসক্তির বিষয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে।
তিয়ানজিন নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিয়াং ওয়াংয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলস দেখার আসক্তি অ্যালকোহল বা জুয়া খেলার মতোই মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
যারা বেশি রিলস দেখেন, তাদের মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (মনোযোগ, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়ী) অতিরিক্ত ব্যবহার হয়। বয়স ২৬-২৭ বছর হওয়ার আগে যদি এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে মনোযোগে সমস্যা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া এবং দৈনন্দিন রুটিনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন
রিলস দেখার সময় মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে, যা আমাদের আনন্দ দেয়। তবে এটির মাত্রা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে আসক্তি এবং মনোযোগের ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। এ ধরনের ছোট ভিডিও রাতে দেখলে ঘুমের মানও নষ্ট হতে পারে, কারণ এটি মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসকে (যা স্মৃতি ও স্থানিক নেভিগেশনের জন্য দায়ী) প্রভাবিত করে।
অধ্যাপক ওয়াংয়ের মতে, যত বেশি সময় আমরা রিলস দেখছি, আমাদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড পাথওয়ে তত বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, দীর্ঘদিনের এই অভ্যাস মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।
তিনি বলেন, চীনে ৯৫.৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতিদিন গড়ে ১৫১ মিনিট রিলস দেখেন। এটি শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি নয়, শারীরিক সমস্যাও ডেকে আনতে পারে।
এই ক্ষতি থেকে বাঁচবেন যেভাবে:
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক কিয়াং ওয়াংয়। তবে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করলে আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১. সময় ব্যবস্থাপনা
প্রতিদিনের জন্য একটি সময়সূচি তৈরি করুন এবং সময় ভাগ করে নিন। কোন সময়টা রিলস দেখার জন্য বরাদ্দ করবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করুন। নির্দিষ্ট সময় পার হলে স্ক্রিন থেকে দূরে সরে যান।
২. নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন
রিলসের নোটিফিকেশন বারবার মনোযোগ কাড়ে। কাজ বা পড়াশোনার সময় সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ রাখতে হবে।
৩. অ্যাপ ব্যবহার করুন
বর্তমানে কিছু অ্যাপ আছে যা আপনার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সময় ট্র্যাক করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সীমাবদ্ধ রাখে। এগুলো ব্যবহার করলে রিলস দেখার সময় নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
৪. অন্য কাজে ব্যস্ত থাকুন
রিলস দেখার অভ্যাস কমানোর জন্য এমন কাজে মন দিন। যেটা আপনার সময়কে আরও মূল্যবান করে তুলবে। যেমন– নতুন কিছু শেখা, ব্যায়াম করা, বা বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেওয়া।
৫. পজিটিভ কন্টেন্ট দেখুন
যদি রিলস দেখতেই চান, তবে চেষ্টা করুন এমন কন্টেন্ট দেখুন যা শিক্ষামূলক বা প্রেরণাদায়ক। মজাদার কন্টেন্ট দেখার অভ্যাস কমাতে এটি সহায়ক হতে পারে।
রিলস বিনোদনের একটি মাধ্যম হলেও, অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার মাধ্যমেই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চেষ্টা করুন সময়কে সঠিক কাজে ব্যয় করতে। ছোট ছোট অভ্যাসই জীবনে বড় পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
বিআরইউ
