ওষুধ নিয়ে ফখরুলের বক্তব্য ব্যক্তিগত, আমরা জনগণের পক্ষেই আছি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, ওষুধ বা মেডিকেল কলেজ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য তার ব্যক্তিগত মতামত, দলীয় বক্তব্য নয়। তিনি বলেন, শিল্পবান্ধব হতে হবে—এটা ঠিক, তবে পৃথিবীর যেকোনো রাজনৈতিক দলই বলবে, ওষুধের প্রশ্নে সরকার জনগণের পক্ষেই থাকবে। আমরাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে স্পষ্টভাবে জনগণের পক্ষেই আছি।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে ‘স্বাস্থ্য সেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, সরকার ওষুধের দাম নির্ধারণে কোনো ধরনের হোস্টাইল অবস্থান নিতে চায় না। তবে দাম নির্ধারণ হবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে, বিশ্বমানের অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে, যুক্তিসংগত ও ন্যায়সংগত মুনাফার সুযোগ রেখে মানুষের জন্য।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে গিয়ে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন দাতা নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে হচ্ছে। এতে কিছু সাময়িক বিঘ্ন ঘটলেও আগামী দেড়-দুই মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং দেশ স্বাধীনভাবে স্বাস্থ্যসেবা চালাতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আইসিইউ সেবার দুরবস্থা প্রসঙ্গে বিশেষ সহকারী জানান, দীর্ঘদিন পরিকল্পনার অভাবে আইসিইউ-সংক্রান্ত জনবল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এবার জরুরি সেবার নতুন একটি সাবজেক্ট চালু করা হয়েছে এবং ভর্তি কার্যক্রমও শিগগির শুরু হবে। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, অ্যাম্বুলেন্স সেবার ক্ষেত্রেও অনিয়ম রয়েছে। সিন্ডিকেটের দখলে চলে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সগুলোর অধিকাংশই মানসম্মত নয়। সঠিক মানদণ্ড প্রয়োগ করলে বর্তমানে দেশে বিদ্যমান অ্যাম্বুলেন্সের ১০ শতাংশও টিকবে না।
চিকিৎসকদের ফি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো পেশাগত ফি নির্ধারিত হয়নি। দরিদ্র রোগীর স্বার্থে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তবে মূল সমস্যা হলো—রেফারেল সিস্টেম না থাকায় রোগীরা সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন, এতে খরচ অকারণে বেড়ে যাচ্ছে।
নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রসঙ্গে বিশেষ সহকারী বলেন, কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই। শর্ত পূরণ না করলে কেবল বাদ পড়তে হয়। বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়া এমন প্রতিষ্ঠান দিয়ে করা হচ্ছে, যাদের রয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, শিশু হাসপাতালে অনিয়মের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। দুর্নীতি নয়, অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছে। তিনি জানান, ১০ হাজার পদোন্নতির কাজ চলছে এবং স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, অতীতে দাতাদের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল থাকার কারণে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে অর্থ ব্যবহারে কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং অধিকাংশ কার্যক্রম রাজস্ব খাতেই নিয়ে আসা হচ্ছে।
সভায় সাংবাদিক ছাড়াও স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
টিআই/এআইএস