তথ্য গোপন, জালিয়াতি ও শৃঙ্খলাভঙ্গ : সেই ডা. ফাতেমা দোজা বরখাস্ত

সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর অগোচরে পুনরায় যোগদান, যুক্তরাষ্ট্রে বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্রে জালিয়াতি, ফৌজদারি মামলার তথ্য গোপন—এসব গুরুতর অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওএসডি ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) ও ৩(গ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা (নং ৪২/২০২৩) দায়ের করা হয়। কারণ দর্শানোর প্রথম নোটিশের কোনো জবাব না দেওয়া এবং ব্যক্তিগত শুনানি না চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ড হিসেবে বরখাস্তের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।
প্রজ্ঞাপনে এই চিকিৎসকের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বিধিমালা ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জনস্বার্থে অবিলম্বে কার্যকর করা হয় বলেও জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে অভিযোগের সূত্রপাত বহু বছর আগে। ২০১২ সালে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করলেও বিষয়টি গোপন রেখে ২০১৩ সালের জুনে একই প্রতিষ্ঠানে সহকারী অধ্যাপক পদে পুনরায় যোগ দেন। অনুপস্থিতির সময়ে তিনি কোনো ছুটি নেননি এবং হাজিরা খাতায় সইও করেননি।
এর আগে, ২০০৪ সালে গৃহকর্মী নির্যাতনের এক মামলায় তিনি চার মাস এক দিন কারাভোগ করেছিলেন। তবে এ তথ্য গোপন রেখে পরবর্তী সময়ে বেতন, ভাতা ও পদোন্নতি ভোগ করেন। এ ছাড়া ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত উত্তর আমেরিকা রেডিওলজি সোসাইটির বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণপত্রে জালিয়াতির অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
বছরের পর বছর বিভিন্ন অনিয়ম ও অসদাচরণ সত্ত্বেও তিনি চাকরিতে বহাল ছিলেন এবং সরকারি সুবিধা ভোগ করেছেন। তদন্তে এসব অভিযোগ একে একে প্রমাণিত হওয়ায় অবশেষে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে চাকরি থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো।
টিআই/জেডএস