মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা : ‘প্রশ্ন সহজ ছিল’ বলছে বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী

২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বড় অংশই মনে করছেন, প্রশ্নপত্র তুলনামূলক কিছুটা সহজ ছিল এবং আগের বছরের তুলনায় কম চাপের। তবে পরীক্ষা প্রসঙ্গে সব শিক্ষার্থীর অনুভূতি এক ছিল না। কেউ কেউ বলছেন, এক–দুটি প্রশ্ন তাদেরকে কনফিউশনে ফেলে দিয়েছিল। তবুও সামগ্রিকভাবে পরীক্ষার্থীদের অভিমত– স্বস্তির পরীক্ষা, প্রতিযোগিতা কঠিন, প্রত্যাশা মিলেমিশে আছে দুশ্চিন্তার সঙ্গে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র এবং ৪৯টি ভেন্যুতে একযোগে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদ ভবনে পরীক্ষা দিতে আসা মীম ইসলাম নামক এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমি হলে ঢোকার পর বেশ কিছুক্ষণ ভয় পাচ্ছিলাম, কারণ অনেকেই বলছিল প্রশ্ন নাকি কঠিন আসবে। কিন্তু হাতে প্রশ্নপত্র পেয়েই বুঝলাম যে সেটা ঠিক না। বায়োলজি আর কেমিস্ট্রির প্রশ্নগুলো খুবই স্ট্রেইট ছিল। যা পড়েছি, সেটা থেকে এসেছে। তাই পরীক্ষা দেওয়ার সময় মনটা একটু একটু করে হালকা হয়েছে।’
মীমের মতে, প্রশ্ন সহজ হওয়ায় সময়ও তুলনামূলকভাবে ভালো কাজে লাগাতে পেরেছেন তিনি। মীমের মতো একই অনুভূতি ব্যক্ত করেন তানভীর আহমেদ নামের আরেক পরীক্ষার্থী। তিনি মনে করেন, এবারের প্রশ্ন স্ট্যান্ডার্ড ঠিক থাকলেও কঠিন ছিল না।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে প্রথম পাঁচ-ছয়টা প্রশ্ন দেখে মনে হচ্ছিল টানাটানি হবে। কিন্তু পরে যখন বাকিগুলো দেখলাম, তখন বুঝলাম এগুলো করা যাবে। প্রশ্নের ধরনটা ছিল ক্লিয়ার। অপ্রয়োজনীয় লম্বা বর্ণনা বা জটিল ফরম্যাট ছিল না। তাই আমি শেষের দিকে বেশ কনফিডেন্ট হয়ে যাই।’ তানভীরের মতে, প্রশ্ন সহজ হলেও প্রতিযোগিতার কারণে ফলাফল নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
প্রস্তুতি পুরোপুরি না নিয়েও পরীক্ষা ভালো হয়েছে বলে জানান উত্তরার পরীক্ষার্থী রাফি হাসান। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি– আমি পুরোপুরি মেডিকেল প্রিপারেশন নেইনি। কিছুদিন ধরে শুধু হালকা রিভিশন করছিলাম। তারপরও পরীক্ষা দিতে এসে দেখি প্রশ্নগুলো খুবই ধরে দেওয়া। আমি মোট ৬৭টা দিতে পেরেছি, যা আমার নিজের কাছেই অবাক লাগছে। আমি ভেবেছিলাম ৫০-৫৫ এর বেশি পারব না। তাই আজকের এক্সপেরিয়েন্সটা আমাকে একটু নতুন আত্মবিশ্বাস দিয়ে গেল।’
তবে সবাই একই অভিজ্ঞতা পাননি। কেউ কেউ প্রশ্নের ভেতর লুকিয়ে থাকা কনফিউজিং অংশ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন। ভিকারুননিসা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী অর্ণব শওকত বলেন, ‘আমি বায়োলজির প্রায় সব প্রশ্নই সহজ পেয়েছি। কিন্তু জেনারেল নলেজ আর প্রবণতা-মানবিক গুণাবলির অংশে কয়েকটা প্রশ্ন ছিল এমন, যা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। মানে– মাঝেমধ্যে মানসিক চাপ বা হতাশার সময় কী করণীয়, কোন পরিস্থিতিতে কাকে পরামর্শ নেওয়া উচিত, এই ধরনের প্রশ্ন। এগুলো আমার কাছে কনসেপ্টচুয়ালি একটু অদ্ভুত লেগেছে। কারণ আমরা সাধারণত এমন ধরনের প্রশ্ন আশা করি না। তাই ওই অংশটা আমাকে একটু থামিয়ে দিয়েছিল।’ অর্ণব মনে করেন, মানসিক চাপ সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সময়কার দোটানার প্রতিফলন।
প্রস্তুতির দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক ও মানসিক চাপের অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন অনেক পরীক্ষার্থী। ঢাকার এক শিক্ষার্থী ফারিহা হক বলেন, ‘মাঝে আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাই এবং কয়েকদিন হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তাররা বলেছিলেন স্ট্রেস-ইনডিউসড সমস্যার কারণে এমন হতে পারে। বাসায় আমার বাবা-মা খুব ভয় পেয়েছিলেন। বাবাকে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় চলে আসতে হয়েছিল। তিনি বলছিলেন—‘তুই একটু বিরতি নে, শরীরের যত্ন আগে।’ তারপরও আমি আবার পড়ায় ফিরেছি, কারণ আমার টার্গেট ছিল পরীক্ষা দেওয়া। আজকে পরীক্ষা দিয়ে আসতে পেরে নিজেকে স্বস্তি লাগছে।’
নম্বর বণ্টন ছিল আগের বছরের মতো ১০০ নম্বরের এমসিকিউ– জীববিজ্ঞান ৩০, রসায়ন ২৫, পদার্থবিজ্ঞান ১৫, ইংরেজি ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান–প্রবণতা–মানবিক গুণাবলি ১৫। ভুল উত্তরে ০.২৫ নম্বর কাটা হয়েছে। পাস মার্ক ৪০। প্রশ্ন সহজ হওয়ায় অনেকে দ্রুত উত্তর দিতে পেরেছেন, আবার কেউ কেউ বলেছেন– সময়ের শেষ পর্যন্ত দুই-তিনটি প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে হয়েছে।
এদিকে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ১৩ হাজার ৫১টি হলেও, গত বছরের তুলনায় এবার আসন কমেছে প্রায় ৫৭২টি। সরকারি ১৪ কলেজে কমেছে ৩৫৫ আসন এবং তিনটিতে বেড়েছে ৭৫ আসন– নিট হিসাবে সরকারি আসন কমেছে ২৮০। বেসরকারিতেও কমেছে ২৯২ আসন। শিক্ষার্থীরা বলছেন– প্রশ্ন সহজ হওয়া সত্ত্বেও আসন কমায় প্রতিযোগিতার চাপ অনেক বেড়ে গেছে, যার কারণে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত উদ্বেগ থেকেই যাবে।
পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে কেন্দ্র পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে সংক্ষেপে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ভিকারুননিসা নূন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রেও যাওয়ার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব ঢাকা কলেজ কেন্দ্র ঘুরে দেখে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, কোথাও বড় ধরনের অনিয়মের খবর পাওয়া যায়নি।
টিআই/বিআরইউ