নিয়ােগ পেলে দেশের যে কোনো প্রান্তে সেবা দেবেন ২ হাজার চিকিৎসক

নিয়ােগপ্রাপ্ত হলে দেশের যে কোনো প্রান্তে চিকিৎসা সেবা দিতে চান ৪২তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, পদ স্বল্পতার কারণে অপেক্ষমাণ থাকা ১ হাজার ৯১৯ জন চিকিৎসক।
রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে এ প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন নিয়ােগপ্রত্যাশী চিকিৎসকরা।
তারা বলেন, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এডহক, ৩৩তম বিসিএস ও ৩৯তম বিসিএস এর মাধ্যমে ১৮ হাজারের বেশি চিকিৎসক নিয়ােগপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সময়ােপযােগী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের মাধ্যমেই দেশে শিশু মৃত্যুহারের পাশাপাশি মাতৃ মৃত্যুহার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে, বেড়েছে দেশের মানুষের গড় আয়ু এবং এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব হয়েছে।
এসময় বিএমএ মহাসচিব বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, করােনা মােকাবিলায় বর্তমান সরকার সারাবিশ্বে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সুযােগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য রােল মডেল। এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সময়ােপযােগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য।
এতে বলা হয়, দেশে করােনায় মৃত্যুহার অনেক কমেছে, দেশের মানুষ করােনা প্রতিরােধী ভ্যাকসিন পাচ্ছে, ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক চিকিৎসক নিয়ােগের জন্য পদ সৃষ্টি হয়েছে এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, মুজিববর্ষে স্বাস্থ্যখাতকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে এবং করােনা পরিস্থিতি মােকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক গত বছরের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ২ হাজার জন চিকিৎসককে সহকারী সার্জন পদে নিয়ােগের কথা বলা হয়। পরবর্তী সময়ে এই বছরের ৩০ জুন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক সভায় আরও ৪ হাজার জন ডাক্তার নিয়ােগের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরে ৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিয়ােগ শাখার এক বিজ্ঞপ্তিতে আরও ৪ হাজার চিকিৎসক অতিরিক্ত নেওয়ার পরিবর্তে ২ হাজার জন অতিরিক্ত নেওয়ার কথা জানানাে হয়। যার ফলে ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক গৃহীত ৪২তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল অনুযায়ী মােট ৫ হাজার ৯১৯ জন উত্তীর্ণ হলেও পিএসসির কাছে পদ স্বল্পতার কারণে ৪ হাজার জনকে সহকারী সার্জন পদে নিয়ােগের জন্য সুপারিশ করে অবশিষ্ট ১ হাজার ৯১৯ জনকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে।
এসময় বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করােনায় এ পর্যন্ত দেশে শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই মারা গেছেন ১৮৬ জন এবং সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন ডাক্তার মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে, কিছুটা হলেও দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি সাধারণ চিকিৎসকদেরও সংকট তৈরি হয়েছে। হাসপাতালগুলােতে চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনায় আরও চিকিৎসক নিয়োগ জরুরি।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় সুপারিশবঞ্চিত ১ হাজার ৯১৯ জনকে ‘সহকারী সার্জন’ হিসেবে শূন্য পদগুলাের বিপরীতে নিয়ােগ দিলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার পথ আরও সুগম হবে। একইসঙ্গে এটি একটি মানবিক কাজও হবে। কারণ আমরা দেখছি এই মেধাবী চিকিৎসকদের নিয়োগ না দিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তারা বিষণ্নতা নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সরকারের উচিত তাদের জন্য কিছু করা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের এইচআরআইএস রিপাের্টের গত ৫ সেপ্টেম্বরের তথ্যানুযায়ী, শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেই চিকিৎসকের পদশূন্য রয়েছে ৫ হাজার ৮৪৮টি। এদিকে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০২১ এর স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা অধ্যায়ের সূচক অনুযায়ী, ডাক্তার ও জনসংখ্যার অনুপাত হচ্ছে ১:১৭২৪ অর্থাৎ প্রতি ১৭২৪ জন মানুষের জন্য ডাক্তার আছেন মাত্র ১ জন। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডাক্তার ও জনসংখ্যার অনুপাত ১:১০০০ থাকা উচিত বলে মনে করা হয়।
টিআই/এসএম