আমাদের আরও অনেক চিকিৎসক লাগবে
দেশের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার স্বল্প সময়ে রেকর্ড সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দিলেও এখনো হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসক নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের আরও অনেক চিকিৎসক লাগবে।
রোববার (২৮ নভেম্বর) ঢাকা পোস্টকে স্বাস্থ্য ডিজি বলেন, এই সরকারের সময়ে যে পরিমাণ চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছে, অতীতে কোনো সময়ই এমন হয়নি। একসাথে এত ডাক্তার কখনোই নেওয়া হয়নি।
খুরশীদ আলম বলেন, সরকার যদি চায় নিশ্চয়ই আরও চিকিৎসক নেবে। আমার মনে হয় না এই নিয়োগ কার্যক্রম থেমে যাবে। যারা অপেক্ষমাণ আছে তারা হয়তো নিয়োগ পাবে, আবার নতুন করে হয়তো বিসিএসের আয়োজন করা হবে। সবমিলিয়ে এটা পুরোপুরি সরকারের পলিসি।
৪২তম বিসিএসে (বিশেষ) চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত হয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, উত্তীর্ণ এসব চিকিৎসকরা মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা করেছেন। তখন তিনি নিজেই তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমি তো মনে করি মন্ত্রী মহোদয়ের আশ্বাসই যথেষ্ট। চিকিৎসক নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। হয়তো এ সুযোগে তারাও নিয়োগ পেয়ে যেতে পারেন।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক আরও বলেন, সরকার চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বিসিএসের আয়োজন করেছে। পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণ প্রায় ছয় হাজার চিকিৎসক থেকে চূড়ান্তভাবে চার হাজার জনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটা পুরোটাই সরকারের পলিসি, এখানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কিছুই করার নেই।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবারও বাড়তে পারে উল্লেখ করে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
৪২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ অপেক্ষমাণ চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই করোনা সংক্রমণ কমে গিয়ে আবারও বেড়েছে। এ সময়ে করোনা যদি আবার দেশে আঘাত হানে, তাহলে কিন্তু আমরা অনেক সমস্যায় পড়ে যাব। কারণ করোনা সংক্রমণ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর পর্যায়ে আছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কোনো হাসপাতালেই পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নেই। এই অবস্থায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, গতিশীল ও সাসটেইনেবল করতে হলে প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ প্রয়োজন।
বিএমএ মহাসচিব আরও বলেন, ৪২তম বিসিএসে যারা পরীক্ষা দিয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েও অপেক্ষমাণ তালিকায় পড়ে আছেন। এখন নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে গেলে আমাদের যে প্রক্রিয়া এবং পরীক্ষার যে ধারাবাহিকতা রয়েছে, এতে প্রচুর সময় ব্যয় হবে। সুতরাং আমরা যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে চাই এবং নিয়োগ দিতে পারি, তাহলে আমরা আগামীতে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকব।
এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো, হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এখনও চিকিৎসক পদ শূন্য আছে, সেই প্রেক্ষাপটে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাইলে ৪২তম বিসিএস থেকে নিয়োগ বঞ্চিতদের এনে নিয়োগ দিতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি পিএসসিতে (বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন) চাহিদাপত্র পাঠায় যে ৪২তম বিসিএস থেকে আমাদের আরও চিকিৎসক নেওয়ার সুযোগ আছে এবং হাসপাতালগুলোতে আমাদের চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে, তাহলেই পিএসসি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, যদি হাসপাতালগুলোতে এ চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আছে। যেমন- কৃষি মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, এমনকি আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও চাইলে পুলিশ হাসপাতালে এই চিকিৎসকদের নিয়োগ দিতে পারে।
৪২তম বিসিএসে অপেক্ষমাণ নিয়োগ প্রত্যাশী ডা. মেহেদি হাসান শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও দিনের পর দিন অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা খুবই কষ্টের। আপনারা জানেন গত বছরের ১৬ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন দেশে ১১ হাজার ৩৬৪ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ওই ঘোষণার পর ৩৮তম বিসিএস থেকে ২৮১ জন, ৪২তম বিসিএস থেকে চার হাজার জন এবং ৪০৯ জন অ্যানেস্থেসিস্ট সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরপরও এখনও ৬ হাজার ৭১০ জনের অধিক চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। কাজেই ৪২তম বিসিএস থেকে অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা ১ হাজার ৯১৯ জনকে যদি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব বর্ষে নিয়োগ দেওয়া যেত, তাহলে আমরাও দেশের স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখার সুযোগ পেতাম। একইসঙ্গে এসডিজিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম।
প্রসঙ্গত, ৪২তম বিসিএস (বিশেষ), পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল অনুযায়ী মোট ৫ হাজার ৯১৯ জন উত্তীর্ণ হলেও বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কাছে পদ স্বল্পতার কারণে ৪ হাজার জনকে ‘সহকারী সার্জন’ পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে অবশিষ্ট ১ হাজার ৯১৯ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর বলছে সারাদেশে প্রায় ১১ হাজারের বেশি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় পরীক্ষায় কৃতকার্য এসব শিক্ষার্থীদের একটাই প্রশ্ন- উত্তীর্ণ হয়েও কেন তারা নিয়োগ বঞ্চিত?
টিআই/এনএফ