বিক্ষোভের আগুন নেভাতে মিয়ানমারে এবার জলকামান ব্যবহার

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্মঘটে নামা কর্মজীবী মানুষের ওপর জলকামান ব্যবহার করেছে মিয়ানমারের পুলিশ। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী নেপিদোতে এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এর আগে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ, অং সান সু চির মুক্তি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে নামে মিয়ানমারের মানুষ। রাজপথে বিক্ষোভের পাশাপাশি কর্মজীবীরা দেশব্যাপী ধর্মঘটে নামায় আন্দোলন পেয়েছে নতুন মাত্রা।

বিবিসি বার্মিজ জানিয়েছে, সোমবার দিনের আলো ফুটতেই রাজধানী নেপিদোর রাস্তায় জড়ো হন লাখো মানুষ। বিক্ষোভে তারা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ এবং অং সান সু চির মুক্তি দাবি করছেন। এছাড়া ইয়াঙ্গুন ও মান্দালাইসহ দেশের অন্য শহরগুলোতেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ সোমবার বিক্ষোভে নেমেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাজধানী নেপিদোতে জড়ো হওয়া লাখ লাখ মানুষের ওপর পুলিশ জল কামান ব্যবহার করেছে বলে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। ফুটেজে দেখা যায়, সু চির মুক্তির দাবিতে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের একটি অংশের ওপর হঠাৎই জলকামান ব্যবহার শুরু করে পুলিশ। এতে কয়েকজন আহত হন।

বার্তাসংস্থাটি আরও জানিয়েছে, পরে বিক্ষোভকারীদের অনুরোধে জলকামান বন্ধ করে পুলিশ। কিন্তু এরপরও তাদের বিক্ষোভ চলছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইয়াঙ্গুন শহরের প্রাণকেন্দ্র সুলে প্যাগোডা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হাজারখানেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। এছাড়া কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যোগ দিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চলছে অনলাইন প্রচারণাও।

নিন থাজিন নামে ২৮ বছর বয়সী এক পোশাক শ্রমিক সোমবার সকালে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। বার্তাসংস্থা এএফপি’কে তিনি বলেন, ‘আজ ছুটির দিন নয়, কর্মদিবস। কিন্তু আমরা কাজে যোগ দিচ্ছি না। এমনকি যদি আমাদের বেতনও কেটে নেওয়া হয়, তবুও না।’
এর আগে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো শনিবার বড় ধরনের বিক্ষোভে নামে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। এসময় বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। একইসঙ্গে বিক্ষোভকারীরা ‘সামরিক স্বৈরশাসক, ব্যর্থ, ব্যর্থ’, ‘গণতন্ত্র, জয়, জয়’ স্লোগান দেন; তাদের হাতে ‘সামরিক স্বৈরশাসক নিপাত যাক’ ব্যানারও দেখা যায়। ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন ধরনের শুকনা খাবার ও পানি সরবরাহ করেন।

নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে গত সপ্তাহে সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর স্টেট কাউন্সিলার অং সান সু চি’র সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, অং সান সু চিসহ আটক করা হয় অনেক শীর্ষ নেতাকে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স
টিএম