স্বেচ্ছায় ক্যাপিটলে হামলা করে সমর্থকরা, দাবি আইনজীবীদের

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উস্কানিতে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকরা নিজের ইচ্ছাতেই হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবীরা। সিনেটে অভিশংসন শুনানির আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তারা একথা বলেন।
এর আগে গত মাসে ক্ষমতা থেকে বিদায়ের মাত্র কয়েকদিন আগে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন তার ভাগ্য ঝুলছে সিনেটের হাতে। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সিনেটে এই অভিশংসন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা দাবি করেন, গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনা ঘটলেও এই হামলার পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল বলে এফবিআইয়ের তদন্তে দাবি করা হয়েছে। এর অর্থ, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হামলায় উস্কানি দেননি।
এছাড়া সিনেটে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন শুনানিকে অসাংবিধানিক বলেও অভিহিত করেন তারা। তাদের দাবি, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়েছেন। যেহেতু ট্রাম্প এখন আর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে নেই, তাই তার বিরুদ্ধে এই শুনানি হতে পারে না। ট্রাম্প এখন কেবলই একজন সাধারণ নাগরিক বলে দাবি করেন তারা।
সিনেটে ট্রাম্পের এই অভিশংসন বিচারে প্রসিকিউটরের ভূমিকায় থাকবেন প্রতিনিধি পরিষদের নয়জন ডেমোক্র্যাট সদস্য। গত ৬ জানুয়ারি সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ট্রাম্পের ভাষণকে উস্কানি হিসেবে চিত্রায়িত করায় তার আইনজীবীরা এই ডেমোক্র্যাট সদস্যদের ‘বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসৎ এবং বাস্তবতাবিবর্জিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সিনেটের এই শুনানিকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ এবং ‘নির্লজ্জ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে তারা বলেন, একজন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তথা সংখ্যালঘু দলকে (রিপাবলিকান পার্টি) চুপ রাখতেই এই কাজ করছে ডেমোক্র্যাটরা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘এই অভিশংসন যে প্রক্রিয়ায় এগিয়েছে, তাতে আর যাই হোক এখানে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের কথা ভাবা হয়নি।’
জো বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন। সমর্থকদের চালানো এই হামলায় ট্রাম্প উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরপর গত ১৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। আর এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়েন তিনি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগও করেছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের হাতে। সিনেটে অভিশংসিত হলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না তিনি।
সূত্র: বিবিসি
টিএম