বিক্ষোভ ঠেকাতে মারমুখী মিয়ানমারের পুলিশ

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে টানা চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছে মিয়ানমারের জনগণ। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এদিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষোভ করায় মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালাইসহ দেশটির আরও বেশ কিছু স্থানে রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। এছাড়া বিক্ষোভ-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একসঙ্গে পাঁচ জন বা এর বেশি মানুষের জড়ো হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিধিনিষেধ না মানলে অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে ঘোষণা প্রচার করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
— Wa Lone (@walone4) February 9, 2021
কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও মঙ্গলবার সকালে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভে নামেন সাধারণ মানুষ। পরে তাদের সরিয়ে দিতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। বিবিসি জানিয়েছে, বাগো শহরে মঙ্গলবার সকালে বিশালসংখ্যক বিক্ষোভকারীর মুখোমুখি অবস্থান নেয় পুলিশ। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।

বার্মিজ গণমাধ্যম মিয়ানমার নাউ জানিয়েছে, রাজধানী নেপিদোতে বিক্ষোভরত মানুষের ওপরও কলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। মিয়ানমারের অন্য শহরগুলোতেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমটি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিক্ষোভ দমাতে জলকামান ব্যবহারের পাশাপাশি নেপিদোতে মঙ্গলবার ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে ২৭ জনকে আটক করা হয়।

মঙ্গলবার অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন শিক্ষক থেইন উইন সোয়ে। বিক্ষোভে জান্তা সরকারের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি’কে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের হুমকি নিয়ে মোটেও চিন্তা করছি না। আর তাই (হুমকির পরও) আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি। ভোটে জালিয়াতি হয়েছে বলে তারা যে অভিযোগ করেছে, সেটা আমরা মানি না। আমরা আর কোনো সামরিক শাসন চাই না।’
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং সরকারকে উৎখাতের বিষয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লেইং। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন তিনি।
— Myanmar Now (@Myanmar_Now_Eng) February 9, 2021
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের পর দেওয়া জেনারেল হ্লেইংয়ের প্রথম ভাষণে মূলত দুটি বিষয় ছিল। তার ভাষণের বেশিরভাগ সময় জুড়ে ছিল অভ্যুত্থানের পক্ষে কারণ বা যুক্তি তুলে ধরা। তবে সেই তুলনায় অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের প্রতি তার হুমকি ছিল তুলনামূলক কম।
তবে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে সরাসরি কোনো হুমকি না দিয়ে জেনারেল হ্লেইং কেবল এটাই বলেন যে, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
এছাড়া আবেগের বশবর্তী হয়ে আন্দোলন না করে বাস্তব ও সত্য ঘটনা জেনে সেই অনুযায়ী চলতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সূত্র: বিবিসি
টিএম