গণতন্ত্র ধ্বংস করবেন না, জনগণকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফল উল্টে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়া মিয়ানমারের নতুন সামরিক জান্তা সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস না করতে জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছে। টানা চারদিনের মতো মঙ্গলবার রাজধানী নেইপিদোসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের অভ্যত্থানবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমান্বয়ে জোরাল হয়ে ওঠার পর প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের হুমকিও দিয়েছে সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, শৃঙ্খলা না থাকলে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এবং যারা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের ক্ষতি করবেন, তারা আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে পারেন।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকার জনসমাগমে বিধি-নিষেধ এবং দেশটির রাজধানী নেইপিদোসহ বড় বড় শহর ও উপশহরগুলোতে নতুন করে কারফিউ আরোপ করেছে। দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে গত চারদিন ধরে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভে পুলিশ জনগণের ওপর লাঠিচার্জ, জলকামান নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পত্রিকা দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিষিদ্ধ এবং গাড়িযোগে অথবা পায়ে হেঁটেও বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি উন্মুক্ত স্থানে কেউ রাজনৈতিক কোনও বক্তৃতা দিতে পারবেন না।
দেশটির বেশিরভাগ প্রধান শহর ও উপশহরে রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সোমবার রাত থেকে কারফিউ কার্যকর হবে বলে জানানো হলেও বিধি-নিষেধ কখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে সেবিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
এদিকে, ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে মঙ্গলবার হাজার হাজার মানুষ অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামানের পাশাপাশি ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। এ সময় অন্তত ২৭ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। স্থানীয় দুটি গণমাধ্যম ওই বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মার একজন প্রতিনিধিও রয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের মারধর ও সহিংসতার ভিডিও ধারণের সময় এই সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহিংস উপায়ে বিক্ষোভ দমনের অতীত ইতিহাস সত্ত্বেও লাখ লাখ মানুষ দেশজুড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করছেন।
সেনাবাহিনীর হুমকি ও বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে মঙ্গলবারও রাজধানী নেইপিদোসহ বিভিন্ন শহরে লাখ লাখ মানুষ অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিচ্ছে।বিক্ষোভকারীরা দেশটির আটক নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি ও বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন।
সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স।
এসএস