বিরোধী নেতার বিদায়ে মোদির চোখে জল

ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য এবং বিরোধী দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা গোলাম নবি আজাদের শেষ কার্যদিবসে তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কথা বলার সময় কয়েবার চোখ মোছেন তিনি, কণ্ঠ রূদ্ধ হয়ে আসে তার। গোলাম নবি আজাদকেও এ সময় চোখ মুছতে দেখা যায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বছর ধরে শ্রী গোলাম নবি আজাদকে জানি। তিনি এবং আমি একই সময়ে জম্মু ও কাশ্মির এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছি। তবে তাকে আমি চিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে থেকেই, যখন তিনি মাঠের রাজনীতিতে অনেক বেশি ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। বাগান করা যে তার খুব প্রিয় একটি কাজ তা অনেকেই জানে না, আমি জানি।’
নিজেদের রাজনৈতিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ২০০৭ সালে কাশ্মিরে গুজরাটের একটি পর্যটক দলের ওপর হামলার কথা স্মরণ করে মোদি বলেন, ‘২০০৭ সালে কাশ্মিরে ভ্রমণকারী গুজরাটের পর্যটকদলের ওপর যখন হামলা হলো—সে রাতের কথা আমি কখনও ভুলব না। গোলাম নবি সাহেব আমাকে ফোন করেছিলেন এবং এমনভাবে আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যেন হামলার মুখে পড়া গুজরাটের ওই অসহায় মানুষগুলো তার নিজের পরিবারের সদস্য। মানসিকভাবে তিনি এই পরিমাণ সংবেদনশীল একজন মানুষ…’ এসময় কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভারতের প্রধানমন্ত্রী; তাকে চোখ মুছতে দেখা যায় এবং কণ্ঠ বাস্পরুদ্ধ হয়ে আসায় পানি পানের বিরতি নেন তিনি। তার অদূরে উপবিষ্ট গোলাম নবি আজাদের চোখেও এসময় দেখা যায় অশ্রু।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই রাতে তিনি যখন টেলিফোন করে আমার সঙ্গে কথা বলেন- সেটা ছিল আমার জন্য খুবই আবেগপূর্ণ মূহুর্ত। ক্ষমতা আসে, চলেও যায়..কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে কীভাবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হয়…’ কথা শেষ না করেই গোলাম নবী আজাদের প্রতি স্যালুট দেন তিনি, রাজ্যসভার অন্যান্য সদস্যরা এ সময় টেবিল চাপড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানান।
গোলাম নবী আজাদকে ‘সত্যিকারের বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি আপনাকে কখনও অবসরে যেতে দেব না। সবসময়ই আপনার পরামর্শ নেব। আমার ঘরের দরজা আপনার জন্য সবসময় খোলা থাকবে।’
‘আমি চিন্তিত, গুলাম নবি সাহেবের পরে যিনি এই আসনে বসতে চলেছেন, তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কারণ, নবি সাহেব শুধু মাত্র দলীয় আদর্শের প্রতিনিধি ছিলেন না, তিনি ছিলেন দেশের একজন প্রতিনিধি। তিনি রাজ্যসভা ও দেশকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতেন। একই কথা বলতে হয় শারদ পাওয়ারকে নিয়েও।’
গোলাম নবি আজাদও তার বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা দুজন ভিন্ন দল করি, পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, কিন্তু আমাদের ব্যাক্তিগত সম্পর্কে কখনও তার প্রভাব আপনি পড়তে দেন নি।’
‘যে কোনো উৎসবে দু’জন নেতা সবসময় আমাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান- সোনিয়া গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদি।’
সূত্র: এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ