বছরে ৮৭ লাখ প্রাণ কেড়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি

জীবাশ্ম জ্বালানি কারণে সৃষ্ট বায়ু দুষণের কারণে ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে মারা গেছেন ৮৭ লাখ মানুষ; অর্থাৎ ওই বছর মোট যত মানুষ মারা গেছেন বিশ্বে, তার প্রতি ৫ জনে ১ জনের মৃত্যুর কারণ যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও অন্যান্য বিভিন্ন উৎসে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো।
হার্ভার্ড, বার্মিংহাম, লিচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা এ নিয়ে যৌথ গবেষণা করেছেন। তাদের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান।
মৃত্যুর এই উচ্চহার এমনকি বিস্মিত করেছে এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদেরও। এর আগের গবেষণাগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে এত মৃত্যুহারের বিষয়টি উঠে আসেনি।
গবেষণা প্রকল্পের অন্যতম সদস্য এবং ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ইলোইস ম্যারিয়াস এ বিষয়ে গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘গবেষণার ফলাফল দেখে প্রথম পর্যায়ে আমরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা উচিত হবে কী না তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। এ কারণে আবারো প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেসময়ও যখন একই তথ্য বেরিয়ে এল, তখন বুঝলাম, আমাদের গবেষণা সঠিক ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি ও তার প্রভাব- এই ক্ষেত্রটি আসলে অনেক বিস্তৃত। যত বেশি এ বিষয়ক গবেষণা করা হবে- তত বেশি তথ্য আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে।’
গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাড়ি ও যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানি বেশি ব্যবহার করা হয়, সেখানে মৃত্যুহার বেশি। দূষণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। চীন ছাড়াও পূর্ব এশিয়ায় দূষণের কারণে মৃত্যুহার বেশি। সে তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানি কম ব্যবহার হওয়ায় দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায় দূষণে মৃত্যুহার কম।
২০১৮ সালে দূষণে ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মৃত্যু ও রোগ সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা রেখেছে এই দূষণ। প্রতিবছর ধূমপান ও ম্যালেরিয়ায় যত মানুষ মারা যান, দূষণে মৃত্যুর হার তার চেয়েও বেশি। গবেষকরা জীবাশ্ম জ্বালানিসৃষ্ট দূষণের সঙ্গে হৃদ্রোগ, শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা এমনকি দৃষ্টিশক্তি হ্রাসেরও সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন। তারা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ না থাকলে বিশ্বের জনসংখ্যার গড় আয়ু এক বছরের বেশি বেড়ে যাবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতের খরচ ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার কমে যাবে।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ সায়েন্সেসের নাক, কান ও গলার চিকিৎসক নিলু তুমালা বলেন, ‘বায়ুদূষণ যে অদৃশ্য হন্তারক, এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই, তা প্রত্যেকের ওপরেই প্রভাব ফেলে। তবে শিশু, বয়স্ক ও কম আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব বেশি। শহুরে এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ওপর সবচেয়ে বাজে প্রভাব পড়ে।’
দূষণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। চীন ছাড়াও পূর্ব এশিয়ায় দূষণের কারণে মৃত্যুহার বেশি। সে তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানি কম ব্যবহার হওয়ায় দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায় দূষণে মৃত্যুহার কম
গবেষক ম্যারাইস বলেন, ‘স্বাস্থ্য, জলবায়ু এবং পরিবেশের ওপর সত্যিই বড় প্রভাব ফেলছে জীবাশ্ম জ্বালানি, তাই আমাদের আরও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দরকার। কিছু সরকারের কার্বন-নিরপেক্ষ লক্ষ্য রয়েছে, তবে জনস্বাস্থ্যের বিশাল ক্ষতির দিক বিবেচনায় তা আরও এগিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জরুরি কাজ করা প্রয়োজন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
এসএমডব্লিউ