ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি সাংবিধানিক: সিনেট

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি সাংবিধানিক এবং নির্ধারিত দিন থেকেই এর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টের অভিশংসন শুনানি হতে পারে না এবং তা অসাংবিধানিক বলে ট্রাম্পের আইনজীবীদের মন্তব্যের পর মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) একথা জানাল সিনেট।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি চলবে কি না সে সিদ্ধান্ত নিতে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। ১০০ সদস্যের সিনেটে ৫৬-৪৪ ভোটে ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানি অনুষ্ঠানের পক্ষে রায় দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ট্রাম্পের শুনানি হওয়ার পক্ষে ৬ জন রিপাবলিকান সিনেটরও ভোট দিয়েছেন।
মঙ্গলবার মেরিল্যান্ডের আইনপ্রণেতা জ্যামি রাসকিন সিনেটে বলেন ট্রাম্পকে জবাবদিহি না করা হলে এটি ‘ব্যতিক্রম ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে’। তার মতে, ভবিষ্যতে কেউ এমন ভুল কাজ করলেও অভিশংসন এবং বিচারের মুখোমুখি হবে না।
এর আগে বিচারের প্রক্রিয়া ও কাঠামো নিয়ে সোমবার সিনেটের নেতারা একমত হন। ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের ন্যায্য ও সঠিক অভিশংসন বিচার নিশ্চিতে এর কাঠামো নিয়ে সব পক্ষ একমত হয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, বিচার সংবিধান সম্মত কি না, মঙ্গলবারের এ সংক্রান্ত ভোট ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে যাওয়ায় স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল থেকে উভয়পক্ষের প্রাথমিক যুক্তিতর্ক শুরু হবে; এই পর্বে দুপক্ষই তাদের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ ১৬ ঘণ্টা করে সময় পাবে।
যুক্তিতর্ক শেষ হলে উভয়পক্ষকে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন সিনেটররা। এরপর অভিশংসন ব্যবস্থাপকের (ইমপিচমেন্ট ম্যানেজার) এর ভূমিকায় থাকা ৯ জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা শুনানির স্বার্থে সাক্ষী ডাকা কিংবা পরোয়ানা জারির অনুরোধ জানিয়ে বিচারপর্ব দীর্ঘায়িত করবেন কি না তা অবশ্য এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ট্রাম্প সিনেটে সাক্ষ্য দেবেন না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উস্কানিতে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকরা নিজের ইচ্ছাতেই হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেন তার আইনজীবীরা।
সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনা ঘটলেও এই হামলার পরিকল্পনা আগেই করা হয়েছিল বলে এফবিআইয়ের তদন্তে দাবি করা হয়েছে। এর অর্থ, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হামলায় উস্কানি দেননি।
এছাড়া সিনেটে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন শুনানিকে অসাংবিধানিক বলেও অভিহিত করেন তারা। তাদের দাবি, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়েছেন। যেহেতু ট্রাম্প এখন আর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে নেই, তাই তার বিরুদ্ধে এই শুনানি হতে পারে না। ট্রাম্প এখন কেবলই একজন সাধারণ নাগরিক বলে দাবি করেন তারা।
তবে একথা মানতে নারাজ ডেমোক্র্যাটরা। ক্যাপিটলে হামলার মাত্র সপ্তাহখানেকের মাথায় প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত করেন তারা। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগও করেছিলেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন। সমর্থকদের চালানো এই হামলায় ট্রাম্প উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে সিনেটের হাতে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় সিনেটে অভিশংসিত হলেও হয়তো ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসবে না। তবে প্রার্থী হতে পারবেন না ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজয়ের পরই ট্রাম্প অবশ্য ২০২৪ সালের জন্য নিজের প্রার্থিতার কথা জানান দিয়ে রেখেছেন।
সূত্র: বিবিসি
টিএম