আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের উদ্দেশ্য কী?

মঙ্গল গ্রহে এই প্রথমবারের মতো মহাকাশযান পাঠিয়েছে আমিরাত। ‘হোপ প্রোব’ নামের ওই মহাকাশযানটি মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশের পর দেশটি এখন এই সাফল্য উদযাপন করছে।
পঞ্চম দেশ হিসেবে মহাকাশ গবেষণার জন্য মঙ্গলে যান পাঠালো আমিরাত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইইউ ও চীন ‘লাল গ্রহ’ নামে পরিচিত এই গ্রহটিতে এ ধরনের অনুসন্ধান চালিয়েছে।
মঙ্গলের উদ্দেশ্যে এই যানটি পৃথিবী ছেড়ে গেছে আজ থেকে প্রায় সাত মাস আগে। কিন্তু মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ভেতরে ঢুকে পড়তে এটিকে কিছুটা সময় ক্ষেপণ করতে হয়েছে।
তাদের এই স্যাটেলাইটে আছে তিনটি যন্ত্র। এসব যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে এক সময়ে মঙ্গলে যে প্রচুর পানি ছিল তা কোথায় হারিয়ে গেল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজ্ঞানীরা এখন হোপ নামের ওই মহাকাশযানের মাধ্যমে ওই লাল গ্রহ মঙ্গলের পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার পর তা নিয়ে গবেষণা করবেন।
তাদের এই স্যাটেলাইটে আছে তিনটি যন্ত্র। এসব যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে এক সময়ে মঙ্গলে যে প্রচুর পানি ছিল তা কোথায় হারিয়ে গেল।
সেখান থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের ক্ষুদ্রতম একক বা নিউট্রাল অ্যাটম সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা চালানো হবে। এছাড়া ওই গ্রহটি থেকে হাই রেজুলেশনের অত্যন্ত উচ্চ মানের ছবিও পৃথিবীতে পাঠাবে হোপ।
পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণের পর যানটি ঘণ্টায় এক লাখ ২০ কিলোমিটার গতিতে মঙ্গল গ্রহের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু মঙ্গলের কক্ষপথে উঠে পড়ার আগে পথচ্যুত হয়ে যন্ত্রটি যাতে মহাকাশের গভীরে হারিয়ে না যায় সেজন্য ২৭ মিনিটের জন্য এর গতি কিছুটা কমাতে হয়েছিল।
যানটির ভেতরে থাকা কিছু যন্ত্রের সাহায্যে এটা করা হয়। এর ঠিক ১১ মিনিট পরে এই মহাকাশযানটির মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছানোর খবর পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। মঙ্গল ও পৃথিবীর মধ্যে যে ১৯ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব সেই পথ পাড়ি দিয়ে সঙ্কেত পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে এই সময় লেগেছে।
এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজ্ঞানীদের মধ্যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মোহাম্মদ বিন রশিদ মহাকাশ কেন্দ্রে তারা যেন ঠিক এই মুহূর্তটির জন্যেই এতদিন অপেক্ষা করছিলেন।
হোপ প্রোবের প্রকল্প পরিচালক ওমরান শরাফ বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহে আমাদের যাত্রায় সবচেয়ে বিপদজনক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল গ্রহটির কক্ষপথে প্রবেশ করা। এ সময় মহাকাশ যান হোপ যে ধরনের চাপের মুখে পড়েছে সে রকম অভিজ্ঞতা এর আগে তার কখনো হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা বিরাট মাইলফলক অর্জন করেছি। এখন আমরা বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গবেষণা শুরু করার জন্য অপেক্ষা করছি।’
গত কয়েকদিন ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই হোপ মিশনের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। সরকারি সব গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, ভবন ও ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানগুলোতে জ্বালানো হয় লাল আলো।
মানুষের তৈরি সর্বোচ্চ ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফাতে আলো জ্বালিয়ে মঙ্গলবারের ঐতিহাসিক এই মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষণগণনা দেখানো হচ্ছিল।
এই হোপ মিশনটিকে পারস্য উপসাগরীয় এই ছোট দেশটির জন্য বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাত বছর আগে তারা এ রকম একটি মিশন পাঠানোর কথা প্রথম চিন্তা করেছিল।
দেশটির প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ও মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান সারাহ আল আমিরি বলেন, ‘আমরা মঙ্গলে পৌঁছাতে চেয়েছি, আমি আসলেই কৃতজ্ঞ, মনে হচ্ছে কাঁধের ওপর থেকে সাত বছরের একটা ভার নেমে গেছে।’
হোপ এখন মঙ্গলের চারিদিকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরছে। আগামী কয়েকদিনে মধ্যে এটি তার নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, যে পথ ধরে স্যাটেলাইট হোপ মঙ্গলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সেগুলো আগের স্যাটেলাইটগুলোর পথের চেয়ে একেবারে আলাদা। ফলে এটি এখন মঙ্গলের অনেক কাছে যেতে পারবে এবং সেখান থেকে মঙ্গল-পৃষ্ঠের অত্যন্ত উঁচু মানের ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে সক্ষম হবে।
হোপ থেকে যে রোবটটি মঙ্গলে অবতরণ করবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানকার পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডল সম্পর্কেও অনেক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে সংযুক্তর আরব আমিরাতের বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।
বলা হচ্ছেন, হোপ মিশন থেকে এমন কিছু গবেষণা করা হবে যা আগে করা হয়নি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে এনার্জি বা শক্তি কিভাবে বায়ুমণ্ডলের একেবারে তলা থেকে সবচেয়ে উপরে উঠে যায় তার রহস্য ভেদ করা। এ বিষয়ে ধূলিকণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে ধারণা করা হয়— যা ঝড়ে রূপ নিয়ে পুরো গ্রহটিকে ঘিরে ফেলে।
আমিরাতের এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ব্রেইন এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, ‘মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ধূলিকণা। পৃথিবীতে অল্প কিছু স্থান আছে যেখানকার বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণা আছে, থাকলেও সেগুলো স্থানীয়ভাবে থাকে এবং অল্প কিছু সময়ের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘ধূলিকণা প্রচুর শক্তি শুষে নেয়। এটা প্রচণ্ড গরম হয়ে যেতে পারে ও শক্তি বিকিরণ করতে পারে। ফলে যখন শক্তি পরিবহনের কথা বলবেন, তখন মঙ্গলে এই ধূলিকণা অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে।’
হোপ ছাড়াও এই ফেব্রুয়ারি মাসে মঙ্গল গ্রহে আরও কয়েকটি যান পাঠানো হচ্ছে। বুধবার চীন পাঠাবে তিয়ানওয়েন-১। এটিও একটি রোভার নিয়ে যাবে মঙ্গলে।
ধারণা করা হচ্ছে, সেটি অবতরণ করবে মে মাসে। আগামী সপ্তাহে পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। প্রিজারভেরান্স নামের রোবটটি পাঠানো হবে সেখানকার একটি বিশাল গর্তকে লক্ষ্য করে।
ধারণা করা হয় সেখানে একসময় পানির লেক ছিল। রোবটটি সেখানে জীবাশ্ম হওয়া জীবনের সন্ধান করবে। বিবিসি বাংলা
এএস