বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল শ্রীলঙ্কার রাজনীতি। ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে গত দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
বুধবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত প্রধানমন্ত্রী। গালে ফেস গ্রিনে (শ্রীলঙ্কার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র) হতে পারে এই বৈঠক।’
গোতাবায়া ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন চলছে শ্রীলঙ্কায়। সেই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকিও দিয়েছেন পার্লামেন্টের বিরোধী এমপিরা। এই পরিস্থিতিকেই সড়কে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের বৈঠকের প্রস্তাব দিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে একটি কার্যকর পথ খুঁজে বের করাই এ বৈঠকের উদ্দেশ্য।। বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘বর্তমানে দেশ ও জাতি যে সংকটে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণে বিক্ষোভকারীরা যদি কোনো প্রস্তাব আনেন এবং সে বিষয়ে আলোচনা করতে চান, কেবল সেক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।’
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এর একটি বড় কারণ।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমেছে যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো যাবে না।
মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, রিজার্ভ বাঁচাতে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে পরিমাণ রিজার্ভ এখনও আছে, তা কেবল অতি জরুরি পণ্য আমাদানিবাবদ ব্যয় করা হবে।
বিদেশি মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গত মাসে ডলারের বিপরীতে শ্রীলঙ্কান রুপির মান পড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।
এদিকে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে খাদ্য-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না দেশটি, ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গণপরিবহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা।
বিদ্যুৎ-খাদ্য-ওষুধ-জ্বালানি সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার জনগণ গত কিছু দিন ধরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন, এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোসহ দেশের সব বড় শহরে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা।
এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাজধানী কলম্বোর বিভিন্ন সড়কের ধারে অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন অনেক বিক্ষোভকারী। তাদের বক্তব্য— প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না তারা।
এদিকে, আগামী সপ্তাহে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থঅ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা আছে শ্রীলঙ্কার সরকারের। সেই বৈঠকে নতুন আরেক দফা ঋণ চাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।
তবে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইতোমধ্যে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে ঋণ দেবে না সংস্থাটি। শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত এ কারণেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার সরকার বিরোধীদের মূল অংশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে একেবারেই প্রস্তুত নয়। পার্লামেন্টে সক্রিয় বিরোধী দলগুলোর জোট সামাগি জানা বালাওয়েগায়ার (এসজেবি) অন্যতম নেতা এরান বিক্রমারত্নে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে ১ সপ্তাহের সময় দিয়েছেন তারা; যদি এই সময়সীমার মধ্যে তারা পদত্যাগ না করেন, সেক্ষেত্রে এসজেবি পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে।
রয়টার্সকে বিক্রমারত্নে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। এই সরকারের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই।’
এসএমডব্লিউ