উহানে করোনার বিস্তার নিয়ে নতুন তথ্য জানাল ডব্লিউএইচও

করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) যে প্রতিনিধিরা চীনে গিয়েছিলেন তারা বলেছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিস্তার অনেক বেশি ছিল। সংক্রমণের মাত্রা সম্পর্কে আগে যা ভাবা হয়েছিল, আসলে সেই চিত্র তারচেয়েও বেশি বলে তারা তদন্তে আলামত পেয়েছেন।
সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ডব্লিউএইচও’র তদন্তকারীরা জরুরিভিত্তিতে উহানের লাখ লাখ বাসিন্দা রক্তের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি চেয়েছেন। তবে চীন এখন পর্যন্ত সেই অনুমতি দেয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত মিশনের প্রধান পিটার বেন এমবারেক সিএনএনকে বলেছেন, ব্যাপক পরিসরের অনুসন্ধান চালিয়েছেন তারা। এতে ২০১৯ সালে উহানে করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের বেশকিছু আলামত তারা পেয়েছেন।
প্রথমবারের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা একই বছরের ডিসেম্বরেই উহানে করোনাভাইরাসের ১৩টি স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়েছিল বলে নতুন তথ্য পেয়েছেন। এসব স্ট্রেইনের জিনেটিক সিকোয়েন্স করতে পারলে মহামারির উৎস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
করোনাভাইরাস মহামারির উৎস অনুসন্ধানে গত জানুয়ারিতে চীনে যান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা। সেখানে পৌঁছে প্রায় চার সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে শেষে করোনায় আক্রান্ত উহানের প্রথম রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। চীনা কর্মকর্তারা বলেছেন, উহানে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি; যিনি স্থানীয় একটি অফিসের কর্মী। ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রথম এই ব্যক্তির করোনা ধরা পড়ে; যদিও বাইরে ভ্রমণের কোনও ইতিহাস তার ছিল না।
সিএনএন বলছে, করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানে চীনে যাওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিদের তথ্য দিতে বেইজিংয়ের গড়িমসির কারণে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদেরও ধারণা ডিসেম্বরের মাঝের দিকে উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ব্যাপারে চীন তথ্য দিলেও তারও আগে সেখানে করোনার ব্যাপক বিস্তার ঘটে থাকতে পারে।
ডিসেম্বরেই উহানে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি একেবারে নতুন তথ্য।
ডব্লিউএইচওর তদন্ত মিশনের প্রধান পিটার বেন এমবারেক
করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি নিয়ে অন্তত চারটি পূর্বানুমান রয়েছে। তবে ল্যাবরেটরি থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর করোনা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে বলে যে পূর্বানুমান রয়েছে সেটি ঠিক নয়। এই ভাইরাসের সম্ভাব্য আধার হিসেবে কোনও প্রাণীকেও শনাক্ত করা যায়নি। এর ফলে তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে চীনে কোনও প্রজাতির প্রাণীর দেহেই এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেনি।
জাতিসংঘের তদন্ত দলের অস্ট্রেলীয় সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডোমিনিক ডায়ার বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে চীনের উহান শহরে করোনা শনাক্ত হওয়া ১৭৪ জন এবং অন্যান্যদের অপরিমার্জিত তথ্য-উপাত্ত জাতিসংঘের তদন্ত দল চাইলেও কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদের সারসংক্ষেপ সরবরাহ করে। এই আক্রান্তদের মাত্র ১০০ জনকে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে এবং অন্যান্য ৭৪ জনকে তাদের লক্ষণ এবং ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্ত দল বলছে, চীনে কোনও প্রাণীর দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আলামত পাওয়া যায়নি।
এমবারেক বলেন, উহানে ডিসেম্বরে করোনা আক্রান্তের এই সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সংখ্যা হাজারের বেশিও হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের মডেলিং করিনি। কিন্তু আমরা জানি... এই সংখ্যা অনেক বড়। আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ শতাংশ গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। এছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠদের মৃদু উপসর্গ ছিল।
এদিকে, উহানে করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানের কাজে চীনের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মৃত্যু ছাড়াল ২৪ লাখ
নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ২৪ লাখ ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৯৩ লাখের বেশি মানুষ। করোনার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে আসা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ লাখ ১১ হাজার ৪৩৬ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৯৩ লাখ ৮৬ হাজার ২২৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮ কোটি ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭২৮ জন।
আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত, দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার ১৭২ জন। মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৬৪।
করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন এ পর্যন্ত ২ কোটি ৮২ লাখ ৬১ হাজার ৪৭০ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৪ জন। মৃতের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৯৪ জন। শনাক্তের সংখ্যা ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার ৫১৩। আক্রান্তের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে দেশটি।
এসএস