সংক্রমণ এড়াতে বড়দিনে কড়াকড়ি ব্রিটেনে

বড়দিন উদযাপনে যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ শিথিল করার যে পরিকল্পনা ছিল, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ এলাকায় তা বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার মধ্যরাত চার স্তরের বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার
ব্রিটেনের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আজ মধ্যরাত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের লন্ডন, কেন্ট, এসেক্স এবং বেডফোর্ডশায়ারের চার স্তরের বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার।
ইংল্যান্ডের বাদবাকি অংশ, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসে সংক্রমণ এখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে না গেলেও এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চার স্তরের বিধিনিষেধ যে সব এলাকায় আরোপ হতে যাচ্ছে, সে সব এলাকার বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করে বড়দিন উদযাপন করতে হবে।
চার স্তরের বিধিনিষেধ যে সব এলাকায় আরোপ হতে যাচ্ছে, সে সব এলাকার বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করে বড়দিন উদযাপন করতে হবে। বাড়ির বাইরে একত্রিত হওয়া তো দূরের কথা, একে অন্যের বাড়িতেও যেতে পারবেন না তারা।
তবে ইংল্যান্ডের অন্যান্য এলাকা, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের লোকজন বড়দিন বা ক্রিসমাসের দিন একে অন্যের বাড়িতে যেতে পারবেন।

এ বিষয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন প্রচলিত ধরনটির তুলনায় দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ছড়িয়ে পড়ার হার প্রচলিত ধরণটির তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই দেশের কিছু এলাকায় চার স্তরের বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় লকডাউন হিসেবে যার তুলনা করা হচ্ছে, সেই চার স্তরের বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের পুরো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ কেন্ট, বাকিংহামশায়ার, বার্কশায়ার, সারে, ওয়েভারলি, গসপোর্ট, হ্যাভেন্ট, পোর্টসমাউথ, রদার এবং হেস্টিংস শহর।
আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে— এই কড়াকড়ি আরোপ তারই অংশ
স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজন
এই এলাকা বা শহরগুলোতে এতদিন তিন স্তরের বিধিনিষেধ জারি ছিল।
বত্রিশটি পৌরসভা এবং সিটি অব লন্ডনসহ পুরো লন্ডনে এবং ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চল বেডফোর্ড, সেন্ট্রাল বেডফোর্ড, মিলটন কেইনস, লুটন, পিটারবোরো, হার্টফোর্ডশায়ার, এসেক্সে (কোলচেস্টার, আটলেসফোর্ড এবং টেনড্রিং) কার্যকর করা হবে চার স্তরের বিধিনিষেধ।
স্কটল্যান্ডে বড়দিন বা ক্রিসমাসের দিন কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তবে বড়দিনের পরদিন অর্থাৎ বক্সিং ডে বা শপিং ডে থেকে কড়াকড়ি বাড়ানো হবে স্কটল্যান্ডের মূল এলাকায়।
স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজন বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে— এই কড়াকড়ি আরোপ তারই অংশ।
তিনি বলেন, ‘উৎসবের এই মূহুর্তে এখানে দাঁড়িয়ে জনগণকে বিধিনিষেধ আরোপের বার্তা দেওয়া আমার জন্য খুব দুঃখজনক। সত্যি কথা বলতে, আমার কান্না পাচ্ছে’।
এই ভাইরাস যেহেতু তার আক্রমণের ধরণ পরিবর্তন করেছে, তাই নিজেদের রক্ষা করতে আমাদেরও সুরক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
উৎসবের এই আবহে ইতোমধ্যে পুরো যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ইংল্যান্ডের যে সব এলাকায় চার স্তরের লকডাউন আরোপ হতে যাচ্ছে, সে সব এলকায় পেশাগত কাজ কিংবা শিক্ষাগত প্রয়োজন ব্যাতীত অন্য সবাইকে ঘরে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হবে।
প্রকাশ্যে কিংবা জনসমক্ষে দেখা সাক্ষাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় নয় এমন দোকান, সেলুন, পানশালা, ইনডোর জিম এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হবে নির্দেশে।
আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে এই বিধিনিষেধ। তারপর এর ফলাফল মূল্যায়ন করা হবে ৩০ ডিসেম্বর।
চার স্তরের বিধিনিষেধ আরোপ হওয়া এলাকাগুলোতে অন্যান্য এলাকার মানুষদের ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হবে।
আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে এই বিধিনিষেধ। তারপর এর ফলাফল মূল্যায়ন করা হবে ৩০ ডিসেম্বর।
ডাউনিং স্ট্রিটের সংবাদ সম্মেলনে বিধিনিষেধ আরোপের নির্দেশ আরোপের প্রসঙ্গে প্রধামন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এটি খুবই হতাশাজনক, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস যেহেতু তার আক্রমণের ধরণ পরিবর্তন করেছে, তাই নিজেদের রক্ষা করতে আমাদেরও সুরক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন’।
‘কোনো সন্দেহ নেই যে বর্তমানে আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি, তবে আমরা আশা করতে পারি যে আগামী ইস্টার নাগাদ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে, কারণ তখন টিকা আমাদের হাতের নাগালে এসে যাবে’।
এসএমডব্লিউ/এএস