টিকার জন্য ধৈর্য ধরতে বললেন সিরাম প্রধান

করোনাভাইরাসের টিকার জন্য বিদেশি সরকারগুলোকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই) বলেছে, তারা ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী (সিইও) আদর পুনাওয়ালা এক টুইটে বলেছেন, ‘...আমি দয়া করে আপনাদের ধৈর্য ধারণের জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। বিশ্বের অন্যান্য অংশের চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্যের বজায় রাখার পাশাপাশি ভারতের বিপুল চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশনা কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পুনেভিত্তিক এই কোম্পানি ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। ভারত প্রাথমিকভাবে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে যে দুটি ভ্যাকসিন দেশজুড়ে ব্যবহার করছে তার একটি অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড উৎপাদন করছে এই কোম্পানি।
Dear countries & governments, as you await #COVISHIELD supplies, I humbly request you to please be patient, @SerumInstIndia has been directed to prioritise the huge needs of India and along with that balance the needs of the rest of the world. We are trying our best.
— Adar Poonawalla (@adarpoonawalla) February 21, 2021
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। তখন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছে দেশটি।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাদের টিকা দেওয়া হবে, সেই তালিকায় সবার আগে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধারা। তালিকায় তাদের পর রয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্বরা। প্রথম পর্যায়ে ৩ কোটি স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাদের টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে ভারত সরকারের। এর পরের প্রায় ২৭ কোটি পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ব্রাজিল, অনেক নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের দেশ সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু কানাডাসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশেও এই ভ্যাকসিনের চাহিদা বাড়ছে। এমনকি আগামী মাস থেকে কানাডায় কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন সরবরাহের অঙ্গীকার করেছেন পুনাওয়ালা।
ব্রিটেনের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার ভ্যাকসিনের উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিরীক্ষা করছে। এর ফলে পুনে থেকে যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন পাঠানোর পথ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধীরগতির টিকাদান কর্মসূচির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটিতে সমালোচনার মুখে রয়েছে।
যে কারণে আগামী সপ্তাহগুলোতে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ টিকাদান কর্মসূচি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৯ লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; আক্রান্তের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় রয়েছে ভারত।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, দেশটিতে সম্প্রতি দৈনিক প্রায় ১২ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে; যা গত সেপ্টেম্বরে সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছানোর তুলনায় সাম্প্রতিক আক্রান্তের এই সংখ্যা একটি ভগ্নাংশ।
কিন্তু কিছু রাজ্যে সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে বলে রোববার দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এসব রাজ্যে সামগ্রিক পরীক্ষা, নজরদারি এবং করোনাভাইরাসের রূপান্তর পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনার নতুন ধরন, নিরাপদ নন টিকাগ্রহীতারা
ভারতে করোনাভাইরাসের মোট ২৪০টি নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে; যার মধ্যে কিছু ধরন প্রচলিত ভাইরাসের তুলনায় অতিমাত্রায় সংক্রামক এবং বিপজ্জনক। এই ধরনগুলোর সামনে করোনা টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও নিরাপদ নন বলে শনিবার ভারতের চিকিৎসা বিষয়কসর্বোচ্চ গবেষণাকেন্দ্র অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এআইআইএমসি) প্রধান ডা. রণদীপ গুলেরিয়া জানিয়েছেন।
করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে হার্ড ইমিউনিটির কথা বলা হচ্ছে, ভারতে এই ভাইরাসের ২৪০টি নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ায় বর্তমানে বা নিকট ভবিষ্যতে দেশটিতে তা গড়ে ওঠা সম্ভব নয় উল্লেখ করে এনডিটিভিকে গুলেরিয়া বলেন, ‘একটি দেশের অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষের দেহে করোনা প্রতিরোধী শক্তির উপস্থিতি থাকলে তাকে আমার হার্ড ইমিউনিটি বলতে পারি।’
‘কিন্তু সম্প্রতি এ ভাইরাসের যে নতুন ধরনগুলো শনাক্ত হয়েছে, তার অনেকগুলোই টিকার ফলে মানবদেহে সৃষ্ট করোনা প্রতিরোধী প্রোটিনকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। এ কারণে যারা টিকা নিয়েছেন— তারা যে নিরাপদে আছেন, এই মুহূর্তে এমনটা বলার উপায় নেই।’
সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি।
এসএস