মঙ্গলে পারসিভারেন্সের অবতরণের ভিডিও প্রকাশ
মঙ্গলগ্রহে অবতরণের সময়কার ভিডিও প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। স্থানীয় সময় সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে নতুন এই ভিডিওটি প্রকাশ করে সংস্থাটি। অবতরণের ওই ভিডিওটি ধারণ করেছে মহাকাশযান ‘পারসিভারেন্স’।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ওপরের স্তরে ঢুকে পড়ার ২৩০ সেকেন্ড বা তিন মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর থেকেই শুরু হয় সেই ভিডিও ধারণ। ওই সময়টিতে মহাকাশযানের গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ১২ হাজার মাইল বা ২০ হাজার ১০০ কিলোমিটার।
— Thomas Zurbuchen (@Dr_ThomasZ) February 22, 2021
ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায়, ১৮ ইঞ্চি লম্বা ও ২৬ ইঞ্চি চওড়া নাইলনের একটি সিলিন্ডার হঠাৎ করে ফুলেফেঁপে বিস্তৃত হতে শুরু করে। এরপর মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে সেই ছোট্ট সিলিন্ডারটাই সাড়ে ৭০ ফুট চওড়া একটা প্যারাসুটে পরিণত হয়। এরপর এই প্যারাসুটের মাধ্যমেই নামতে শুরু করে নাসার ল্যান্ডার আর তার ভেতরে থাকা রোভার ‘পারসিভারেন্স’। মঙ্গলের মাটি থেকে সেসময় যন্ত্রটির উচ্চতা ছিল মাত্র সাত মাইল। এরপর ধীরে ধীরে নিচে নামতে থাকে সেটি।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নামার সময় যখন নাসার ল্যান্ডারের গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩ মিটার। ভিডিওতে একপর্যায়ে মঙ্গলের বুক থেকে ধুলো-বালি উঠতে দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠের কাছে পৌঁছাতেই রোভারের আটটি চাকাই খুলে যায় এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রোভার মঙ্গলের বুকে অবতরণ করে। অবশ্য ভিডিওর পাশাপাশি শব্দও রেকর্ড করে পাঠিয়েছে রোভারের সঙ্গে থাকা মাইক্রোফোন। এর আগে আর কোনো মহাকাশযানের পক্ষে এই ধরনের ছবি ও শব্দ পাঠানো সম্ভব হয়নি।
— NASAs Perseverance Mars Rover (@NASAPersevere) February 22, 2021
নামার পর মঙ্গলের চারদিকের ছবিও তুলেছে পারসিভ্যারেন্সের ক্যামেরা। মহাকাশযানের মাথায় লাগানো নেভিগেশন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ছবি। পারসিভারেন্সের রোভারে রয়েছে ২৩টি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে মঙ্গল গ্রহের ছবি তুলেছে। মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের এতো কাছ থেকে এই প্রথম ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেল। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠ ঢেউ খেলানো। এছাড়া প্রায়ই ভূপৃষ্ঠে বড় বড় গর্ত রয়েছে বলে দেখা যায়।
এক ঝলকে মঙ্গল গ্রহকে দেখে কোনো মরুভূমি বলে মনে হতে পারে। পারসিভারেন্স মঙ্গল গ্রহে কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরির কাজ করবে। একইসঙ্গে গ্রহে পানি সন্ধানও করবে যন্ত্রটি। এমনকি মঙ্গলের মাটির নিচে জীবনের অস্তিত্বের সম্ভাবনা সন্ধান করার পাশাপাশি সেখানকার আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়েও গবেষণা করবে পারসিভারেন্স।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সফলভাবে মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করে পারসিভারেন্স। স্বয়ংচালিত এই যানটি সাত মাস আগে পৃথিবী থেকে ৪৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ৪৭ কোটি মাইল দূরের গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। মিশনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং অংশ ছিল মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠে যানটির নিরাপদ অবতরণ। আর গত বৃহস্পতিবার মঙ্গলের মাটিতে নিরাপদ অবতরণের সেই মুহূর্তটি যে ঐতিহাসিক ছিল তা নাসার প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
সূত্র: সিএনএন
টিএম