প্রতিবেশীদের দৌড়ঝাঁপে মিয়ানমারে সন্দেহ

সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর মিয়ানমারে যে সঙ্কট শুরু হয়েছে; তার অবসানে প্রতিবেশি দেশগুলোর দৌড়ঝাঁপের মাঝে বুধবার থাইল্যান্ড সফরে গেছেন দেশটির জান্তা সরকারের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্না মং লিউন। সঙ্কটের ইতি টানতে প্রতিবেশিদের প্রচেষ্টা তীব্র হওয়ায় সন্দেহপোষণ করছেন দেশটির অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীরা।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করতে বুধবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উন্না মং লিউন থাইল্যান্ডে গেছেন। দেশটিতে অভ্যুত্থানবিরোধীদের বিক্ষোভ জোরাল হওয়ায় আসিয়ান জোট জোরাল তৎপরতা শুরু করেছে।
এর আগে, গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পরপরই থাইল্যান্ডের জান্তা প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচার সহায়তা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং।
গত ৮ নভেম্বর মিয়ানমারের নির্বাচনে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু সেনাবাহিনী এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে অভ্যুত্থানের ঘটিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি এবং সু চি-সহ এনএলডির জ্যেষ্ঠ অনেক নেতাকে আটক করে। যদিও দেশটির নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
মিয়ানমারের সঙ্কট অবসানে আসিয়ান জোটের উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু জান্তা সরকারের সঙ্গে কোনও ধরনের চুক্তি হলে তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। পাশাপাশি আসিয়ানের উদ্যোগে গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফল বাতিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকর্মীরা।
বুধবার ইয়াঙ্গুনে থাই দূতাবাসের বাইরে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে দেখা গেছে। এ সময় তাদের হাতে ‘আমাদের ভোটের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন’ এবং ‘আমরা এনএলডিকে ভোট দিয়েছি’ লেখা পোস্টার দেখা যায়।
২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডির জয়ের পর অং সান সু চি স্টেট কাউন্সিলরের পাশাপাশি মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ইয়াঙ্গুনের বিক্ষোভকারীরা সেই কথা উল্লেখ করে থাই দূতাবাসের সামনে ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি’ স্লোগানও দেন।
চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী প্রাণহানির ব্যাপারে সতর্ক করে দিলেও দেশটিতে বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সতর্কতা উপেক্ষা করে প্রত্যেকদিন লাখ লাখ মানুষ মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ইন্দোনেশিয়ার পদক্ষেপে মিয়ানমারে জান্তা সরকার শক্ত ভিত পেতে পারে বলে জানানোর পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ দানা বাধে।
থাইল্যান্ডের সরকারি সূত্র বলছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান ওচা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডন প্রামুডউইনাইর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে; তা নিশ্চিত করতে আসিয়ানভূক্ত দেশগুলোর পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে জোটের ভেতরে কাজ করছে ইন্দোনেশিয়া। যদিও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কবে নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেব্যাপারে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা জানায়নি।
তবে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করায় এই সময়ের পর নির্বাচন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, ইন্দোনেশিয়ার এই উদ্যোগের কারণে গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফল বাতিল হতে পারে।
যদিও পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র তিউকু ফাইজাসিয়াহ বলেছেন, মিয়ানমারের নতুন নির্বাচনে তাদের সমর্থন নেই। থাইল্যান্ডে অবস্থানরত ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি শিগগিরই মিয়ানমার সফরে যেতে পারেন বলে জানানো হলেও পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসিয়ান দেশগুলোর কথা বিবেচনায় দেশটিতে সফরে যাওয়ার জন্য এটি উপযুক্ত সময় সময় নয়।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র তিউকু ফাইজাসিয়াহ
জান্তাকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে : যুক্তরাষ্ট্র
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারকে অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন বলেছে, দেশটিতে বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে সাধারণ জনগণের আকাঙ্ক্ষার পক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘সামরিক জান্তার প্রতি আমাদের অবস্থান বদলায়নি। তাদেরকে অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। মিয়ানমারের মানুষের প্রতি আমাদের অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়নি।’
নেড প্রাইস বলেন, ‘আমরা বার্মার জনগণের পাশে ও সঙ্গে আছি। বার্মায় একটি বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতায় ফেরাতে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমরা বিশ্বব্যাপী আমাদের সমমনা মিত্র এবং সহযোগীদের নিয়ে এই সমর্থন অব্যাহত রাখবো।’
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস