পাকিস্তানের সরকার-সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক সাংবাদিক কেনিয়ায় খুন

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার ও সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক অনুসন্ধানী সাংবাদিক আরশাদ শরিফ আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় খুন হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সোমবার সকালের দিকে আরশাদ শরিফ কেনিয়ায় মারা গেছেন বলে পাকিস্তানের এই তারকা সাংবাদিকের স্ত্রী জাভেরিয়া সিদ্দিক নিশ্চিত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় জাভেরিয়া বলেছেন, ‘আজ আমি একজন বন্ধু, স্বামী এবং আমার প্রিয় সাংবাদিককে (আরশাদ শরিফ) হারালাম। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কেনিয়ায় গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আসিম ইফতিখার বলেছেন, কেনিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশন দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ এখনও পাকিস্তানের এআরওয়াই টেলিভিশনের সাবেক অনুসন্ধানী এই সাংবাদিকের মৃত্যু এবং কোন পরিস্থিতিতে তিনি মারা গেছেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
— Javeria Siddique (@javerias) October 24, 2022
তবে পাকিস্তানের কিছু গণমাধ্যমের খবরে প্রথম দিকে শরিফকে কেনিয়ায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে খবর দিলেও পরর্ব্তীতে জানায়, আরশাদ শরিফ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা গেছেন। কিন্তু শরিফের স্ত্রী এক টুইটে বলেছেন, তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, পুলিশের বরাত দিয়ে কেনিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার কেনিয়া বলেছে, ভুল পরিচয়ের এক ঘটনায় শরিফকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ। রোববার রাতে নাইরোবি-মাগাদি মহাসড়কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন সরকার ও সেনাবাহিনীর কট্টর সমালোচক ছিলেন আরশাদ শরিফ। দেশটির বিভিন্ন শহরে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হওয়ায় চলতি বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তান ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান তিনি। সম্প্রতি কেনিয়ায় ঘুরতে যান তিনি; সেখানেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
সত্য বলায় চরম মূল্য চোকালেন আরশাদ শরিফ: ইমরান খান
অনুসন্ধানী এই সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খান। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইমরান খান বলেছেন, শরিফের মৃত্যুতে তিনি হতবাক হয়েছেন।
টুইটারে দেওয়া বার্তায় ইমরান খান বলেছেন, ‘সত্য বলায় জীবনের বিনিময়ে চরম মূল্য দিতে হলো সাংবাদিক আরশাদ শরিফকে। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন এবং বিদেশে আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সত্য বলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ক্ষমতাবানদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। আজ তার মৃত্যুতে পুরো জাতি শোকাহত।’
— Imran Khan (@ImranKhanPTI) October 24, 2022
স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা দ্য হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান (এইচআরসিপি) বলেছে, সাংবাদিকদের নীরব করে দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের সহিংস কৌশলের দীর্ঘ, ভয়াবহ রেকর্ড আছে। যে কারণে শরিফের মৃত্যু সাংবাদিক সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
সাংবাদিক আরশাদ শরিফের মৃত্যুর ঘটনায় অবিলম্বে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরসিপি।
এদিকে, শরিফের মৃত্যু সাংবাদকিতা এবং পাকিস্তানের জন্য ক্ষতি বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। সাংবাদিক শরিফের মৃত্যুতে তিনি গভীর শোক ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও অনুসন্ধানী এই সাংবাদিকের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সূত্র: ডন, দ্য স্টার কেনিয়া।
এসএস