ভূমিকম্প নিয়ে উসকানিমূলক তথ্য : তুরস্কে আটক ২৩

ভূমিকম্প নিয়ে উসকানিমূলক তথ্য ও ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তুরস্কে মোট ২৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৫ জনকে আটকের পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এছাড়া ভুয়া ও উসকানিমূলক তথ্যের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারও সীমিত করা হয়েছে দেশটিতে।
বুধবার তুরস্কের পুলিশ বিভাগের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এক টুইটবার্তায় জানানো হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যেসব আইডি থেকে ভূমিকম্প নিয়ে উসকানি ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো শনাক্ত করা ও এসব আইডি ও হ্যান্ডেলধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে।
‘ভূমিকম্প পরিস্থিতি নিয়ে টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যেসব আইডি থেকে উসকানিমূলক/ ভুয়া সংবাদ, ছবি ছড়ানো হচ্ছে— সেসব শনাক্ত করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ২২০টি আইডি শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মোট ২৩ জনকে আমরা আটক করেছি। আটকের পর ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার থেকে টুইটারের ব্যবহার সীমিত করেছে তুরস্কের সরকার। মোবাইল ফোন থেকে আর টুইটারে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। যাদের নিজস্ব ভিপিএন নেটওয়ার্ক আছে, কেবল তারাই ব্যবহার করতে পারছেন এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মাইক্রোব্লগিং সাইটটি।’
পুলিশের টুইটবার্তায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যেসব ওয়েবসাইটে আমাদের সম্মানিত নাগরিকদের নিয়ে ভুয়া সংবাদ ছড়ানো হয়েছে, সেসবের ব্যবহারও সীমিত করা হচ্ছে।’
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া। ওই ভূমিকম্পের ১৫ মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি বড় ভূমিকম্প এবং পরে আরও অনেকগুলো আফটারশক হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস প্রদেশের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল।
সোমবারের আকস্মিক এই দুর্যোগের দু’দিন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও প্রবল শোকের ধাক্কা থেকে বেরোতে পারছেন না দুই দেশের বাসিন্দারা। কারণ, তুরস্ক ও সিরিয়ায় বিভিন্ন শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকৃত মৃতদেহের সংখ্যা এরইমধ্যে ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দু’দিনে তুরস্কে ধসে পড়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার ৫৭৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন কর্মীরা।
বৈরী আবহাওয়া ও বিপর্যয়ের ব্যাপকতার কারণে উদ্ধার তৎপরতায় বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে শত শত ভবনের নিচে এখনও চাপা পড়ে আছে বহু মরদেহ, আটকা পড়ে আছেন অনেক জীবিত লোকজনও। তাদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, কিন্তু উদ্ধার করা যাচ্ছে না।
আবার যারা অক্ষত আছেন, তারা প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত দু’দিনেও সরকারি-বেসরকারী কোনো খাদ্য বা তাঁবু সহায়তা পাননি; অভুক্ত অবস্থায় ব্যাপক ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
বুধবার সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাহরামানমারোশে গিয়েছিলেন এরদোয়ান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কিছু সমস্যার কারণে প্রাথমিক উদ্ধারকাজে ধীরগতি এসেছিল— তবে খুব শিগগিরই সেসব সমস্যা কেটে যাবে।
দেশের এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
এসএমডব্লিউ