ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বাসাবাড়ি-দোকানে লুটপাট

Dhaka Post Desk

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৩ পিএম


ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বাসাবাড়ি-দোকানে লুটপাট

বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানির পর তুরস্কের বিভিন্ন শহরে লুটপাটের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া ভবন ও দোকানপাট থেকে লোকজন মালামাল ও আসবাবপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গৃহহীন অনেক মানুষ। ধসে যাওয়া ভবন কিংবা দোকানের অনেক বাসিন্দা ও মালিক তাদের মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

সোমবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের হতায়ে প্রদেশের রাজধানী আন্তাকিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে দোকান ও বাসাবাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। ওই শহরের অনেক দোকান ও বাড়ি থেকে মালামাল লুটপাট হয়ে যাওয়ায় তারা এই ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

গত সোমবার স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে প্রতিবেশী তুরস্ক ও সিরিয়ায়। রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে উভয় দেশে এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

ভূমিকম্প আঘাত হানার সাত দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আজ কয়েকজনকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। হাজার হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

আন্তাকিয়ায় অন্যান্য শহর থেকে আসা বাসিন্দা ও দাতব্যকর্মীরা নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কথা তুলে ধরছেন। তারা ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধসে পড়া বাসাবাড়ি, দোকানপাট লুট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

ভূমিকম্পে গৃহহীন হয়ে পড়া লোকজনদের অনেকে এখন তাদের গাড়ির ভেতরে অথবা তাঁবুতে দিন পার করছেন। তারা বলেছেন, তাদের বাড়ি থেকে সোনাসহ নানা ধরনের মূল্যবান সামগ্রী চুরি গেছে।

তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তার সরকার লুটপাটকারীদের কঠোরভাবে দমন করেবে। তিনি লুটপাটকারীদের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের জারি করা আদেশে লুটেরাদের আটকের মেয়াদ এক থেকে বাড়িয়ে চার দিন করা হয়েছে।

এর আগে, রোববার দেশটির বিচার মন্ত্রী বেকির বোজদ্যাগ বলেন, লুটপাটের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ইতোমধ্যে ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিনিধি আন্তাকিয়া শহরের কয়েকটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিককে বাক্সের ভেতরে পণ্যসামগ্রী রাখতে দেখেছেন। তবে তারা সেগুলো ওই এলাকা থেকে কীভাবে সরিয়ে নেবেন অথবা কোথায় রাখবেন, সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্য-সামগ্রীর দোকানের মালিক ইউকসেল উজুন চার্জার এবং মোবাইল ফোনের সামগ্রী বাক্সে ভরার পর কয়েকজনের সহায়তায় দুটি ট্রাকে লোড করছিলেন। ট্রাকে মালামাল তোলার ফাঁকে রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতারক ও চোরেরা লুট করেছে। তারা যা পেয়েছে নিয়ে গেছে। নিয়ে যাওয়ার পর যা অবশিষ্ট আছে, সেগুলো ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সামনের অংশ সুরক্ষিত থাকায় লুটপাটকারীরা দোকানের পেছন দিক থেকে ঢুকে লুটপাট চালিয়েছে। তারা দোকানের পেছন থেকে মালামাল মজুতের কক্ষে প্রবেশ করেছিল।

উজুনকে সহায়তাকারীরা বাক্সে মালামাল তোলার সময় তাদের পাশ দিয়ে একটি সামরিক ট্রাক চলে যায়। এ সময় সেনাসদস্যরা গাড়ি থামিয়ে তারা দোকানের মালিক কিনা জানতে চান। এরদোয়ান জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়ার পর আন্তাকিয়ায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে।

উজুন বলেন, তিনি সুপারমার্কেট, ফার্মেসি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করতে দেখেছেন।

‘তারা সর্বত্র লুটপাট চালিয়েছে। রাস্তার আশপাশের বিভিন্ন বাজার, জুতোর দোকান... আমি তাদের একটি ফার্মেসিতে লুটপাত করতে দেখেছি,’ বলেন তিনি। লুটপাট থেকে বাঁচতে তার দোকানের পণ্যসামগ্রী শহরের বাইরে সংরক্ষণ করবেন বলে জানান তিনি।

 এসএস

টাইমলাইন

Link copied