একদিনে আরও ১০ হাজারের বেশি মৃত্যু

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে একদিনে আরও ১০ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে। ফলে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫১ জনে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সকাল নাগাদ বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫১ জন। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭ কোটি ৯৭ লাখ ১৪ ছাড়িয়েছে।
বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৩।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৯১ লাখ ১১ হাজার ৩২৬। মারা গেছেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬ জন।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৬৮। দেশটিতে মারা গেছেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ১২৮ জন।
ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। ব্রাজিলে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৩। দেশটিতে মারা গেছেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৩২ জন।
তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। ফ্রান্স পঞ্চম। যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ। সপ্তম তুরস্ক। ইতালি অষ্টম। নবম স্পেন আর জার্মানি দশম।
একদিকে যেমন করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে মুক্তির আশা জাগছে মানুষের মনে। বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনের অনুমোদনের পর প্রয়োগও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। ব্রিটেনে নিজেদের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ টিকা ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশটির ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় ৯ জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি।
১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করে ‘কোভিড-১৯’। ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
বাংলাদেশের সর্বশেষ
স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে আরও ১৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৭ হাজার ৩৭৮ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১ হাজার ২৩৪ জন। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৬ হাজার ১০২ জনে দাঁড়িয়েছে।

দেশে করোনার নতুন ধরন
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা (হোল জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটিতে নতুন আরেকটি শক্তিশালী ধরনের অস্তিত্ব মিলেছে। এটির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন ধরনের মিল আছে। তবে এটি এখনো অতটা ভয়ংকর নয়। এর প্রভাব কতটুকু, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
জরুরি ব্যবহারের জন্য আগামী সপ্তাহেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা টিকার অনুমোদন দিতে পারে ভারত সরকার। জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। সরকার সবুজ সংকেত দিলে প্রথম দেশ হিসেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার অনুমোদন মিলবে ভারতে। কারণ, ব্রিটেনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনও এর কার্যকারিতা ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল যাচাই করছেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক গবেষক দল এই তথ্য জানিয়েছেন। গবেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে মূলত ভাইরসাটি বাহককে আক্রমণ করে। এই স্পাইক প্রোটিনে ১ হাজার ২৭৪টি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এর মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিডটি আগে থেকেই বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল।
চিকিৎসাধীন রোগী ভারতে তিন লাখের নিচে
ভারতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থতার হার শুরু থেকেই আশাব্যঞ্জক। এক কোটি এক লাখ আক্রান্তের মধ্যে এরই মধ্যে ৯৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৩ জনই সুস্থ হয়েছে। গতদিন ২৯ হাজার ৭৯১ জনের সুস্থ হওয়ার তথ্য মিলেছে। এই সুস্থতার জেরে কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। কমতে কমতে তা হয়েছে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৮৪৯ জন। গতদিন ২৪ হাজার ৭১২ জনের শনাক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।
হাসপাতালে পড়ে আছে কোটি কোটি টিকা
যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে হাসপাতালে ও বিভিন্ন স্থানে অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে কোটি কোটি ডোজ ভ্যাকসিন। টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর এক সপ্তাহেরও বেশি পার হলেও খুব কম সংখ্যক মার্কিনিই ভ্যাকসিন নিয়েছে।
ফলে চলতি মাসের মধ্যে দুই কোটি নাগরিককে টিকাদানের সরকারি টার্গেট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বুধবার পর্যন্ত মাত্র ১০ লাখ মানুষকে ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যে গতিতে টিকা দেয়ার লক্ষ্য ছিল তা পূরণ হয়নি বলে স্বীকার করেছেন কর্মকর্তারা। রয়টার্স ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
করোনার নতুন ধরন ৫৬ শতাংশ বেশি সংক্রমণে সক্ষম: গবেষণা
যুক্তরাজ্যে পরিবর্তিত করোনাভাইরাস স্ট্রেইনটি আরও সংক্রামক বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী বছর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মানুষের হাসপাতালে ভর্তি বা মৃত্যু হতে পারে। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিভাগের গাণিতিক মডেলিংয়ের কেন্দ্রের সমীক্ষা অনুসারে, করোনার অন্যান্য স্ট্রেইনের চেয়ে নতুন ধরনটি ৫৬ শতাংশ বেশি সংক্রমণে সক্ষম।
এনএফ
