পুতিনের ভ্যাকসিনে ভরসা নেই দেশের মানুষেরই

পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন অনুমোদন করে রাশিয়া। এরপরই নিজ দেশে ভ্যাকসিন তৈরির সফলতাকে ব্যক্তিগত গর্ব ও জাতীয় সম্মানের প্রতীকে পরিণত করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত আগস্ট মাসে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ‘স্পুটনিক-৫’ নামের ওই করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এরপর চলতি মাসের শুরুতে দেশব্যাপী টিকাপ্রদান কর্মসূচি চালানোর আদেশ দেন তিনি। গত সোমবার এক বৈঠকে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকাসিনের সঙ্গে যৌথ পরীক্ষা চালানোর বিষয়ে একমত হয় রুশ ভ্যাকসিন তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিনও অংশ নেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের উৎক্ষেপণ করা বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইটের নামেই রুশ করোনা ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ এর নামকরণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার প্রযুক্তি শক্তি তুলে ধরার একটা বড় সুযোগ পেয়েছেন পুতিন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের উৎক্ষেপণ করা বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইটের নামেই রুশ করোনা ভ্যাকসিন স্পুটনিক-৫ এর নামকরণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার প্রযুক্তি শক্তি তুলে ধরার একটা বড় সুযোগ পেয়েছেন পুতিন। রুশ ভ্যাকসিনের প্রস্তুতকারী গবেষকরা বলছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এই ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশেরও বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। যা যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদন পাওয়া ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিনের মতোই কার্যকর বলে মনে হচ্ছে।
রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩০ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিলের পর সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে পুতিনের দেশেই। আর তাই দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের ওপরই নির্ভর করছে পুতিনের কার্যালয়।
রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩০ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিলের পর সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে পুতিনের দেশেই। আর তাই দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনের ওপরই নির্ভর করছে পুতিনের কার্যালয়।
রাশিয়ার করোনা টিকা দেয়া হচ্ছে পুরোপুরি বিনামূল্যে। মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার আশা করছে দেশটি।
কিন্তু এতো বিশাল সংখ্যায় ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং পরে সেগুলো রাশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা। তবে ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের উৎসাহের চেয়ে অনীহাই বেশি। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মাত্র ৩৮ শতাংশ রুশ নাগরিক। অর্থ্যাৎ অর্ধেকের বেশি রুশ নাগরিক এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন নেওয়ার কোনও পরিকল্পনায় করেননি।
তবে ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের উৎসাহের চেয়ে অনীহাই বেশি। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মাত্র ৩৮ শতাংশ রুশ নাগরিক
মূলত রাশিয়ায় করোনা মহামারির কেন্দ্রস্থল মস্কোতেই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত মস্কোর ২৫ হাজার বাসিন্দাকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এই শহরের ৭০ লাখ বাসিন্দাকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মস্কোর মেয়র সার্গেই সোবইয়ানিন। গুরুতর অসুস্থ নয় এমন ব্যক্তি ছাড়া মস্কোতে বসবাসকারী ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে যেকোন ব্যক্তি টিকা নিতে পারেন।
তবে যাদের জন্য এই টিকা, সেই রুশ নাগরিকরা এ বিষয়ে কতটা আগ্রহী?
ইয়েভগেনি স্ট্যাভিনস্কি নামে একজন অভিনেতা বলেন, রাশিয়ার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন তিনি নিতে চান না। যদিও তার থিয়েটার এটা তাকে নিতে বলছে, তারপরও তিনি টিকা গ্রহণ করবেন না।
৪৫ বছর বয়সী স্ট্যাভিনস্কি আরও বলেন,‘সত্য বলতেই হবে, আমি এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে কিছুই জানি না। ভ্যাকসিনের বিষয়ে কোনো তথ্যও দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া মাত্রই ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, রাশিয়ান বা বিদেশি বলে কোনো কিছু মাথায় আনছি না, ভ্যাকসিনের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন,‘আমি ভীত নই। আমি বিশ্বাস করি- করোনা ভ্যাকসিন শরীরের জন্য যতটা উপকারী তার থেকে বেশি ক্ষতিকর। আমি আশা করি, আমার ও বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমেই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
সন্তানকে খেলাধুলা করাতে মাঠে নিয়ে এসেছেন ওলগা ডেভিট নামে ৩৫ বছর বয়সী এক নারী। তিনিও চান না কোভিড-১৯ প্রতিরোধে তার পরিবারের কাউকে টিকা দেয়া হোক। তিনি বলেন,‘আমি ভীত নই। আমি বিশ্বাস করি- করোনা ভ্যাকসিন শরীরের জন্য যতটা উপকারী তার থেকে বেশি ক্ষতিকর। আমি আশা করি, আমার ও বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমেই এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
নিজের নাতির সঙ্গে বাইরে হাঁটতে বের হওয়া ৬৫ বছর বয়সী ভ্লাদিমির বায়াশেভ বলেন,‘আমার ছেলে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিল। পরে তার স্ত্রী এবং স্ত্রীর ভাই ও বোনও করোনায় আক্রান্ত হন। তাই সতর্ক থাকতে আমি মাস্ক পরি এবং অনেক মানুষের ভিড় থাকে এমন জায়গা এড়িয়ে চলি।’
রাশিয়ার তৈরি করোনা টিকা নিতে চান কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বায়াশেভ বলেন, টিকা গ্রহণকারীদের বয়সের সীমা সরকার একটু বাড়ালেই ভ্যাকসিন নিতে চান তিনি।
একই কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। গত সপ্তাহে বার্ষিক সংবাদ সম্মেলেন ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ৬৮ বছর বয়সী রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী রাশিয়ান নাগরিকরাই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। তাই বয়সের ক্যাটাগরি না বাড়ানো পর্যন্ত তাকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
সূত্র: এনপিআর
টিএম