ভারতে এবার একদিনে ৪১ হাজার আক্রান্ত

চলতি মার্চ থেকে ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন করে সর্বাধিক রোগী আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা একে করোনার আরেকটি ঢেউ বলে সতর্ক করছেন। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মানুষের মধ্যে অনীহাকে এর বড় কারণ হিসেবে দেখছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শনিবার অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে আরও ৪০ হাজার ৯৫৩ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয়েছেন; যা গত নভেম্বরের পর একদিনে সর্বাধিক। দেশটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড ও ধনী রাজ্য হিসেবে পরিচিত রাজ্য মহরাষ্ট্রে গতদিনের মোট সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি শনাক্ত হয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী গতদিনে আরও ১৮৮ জনের মৃত্যুর পর দেশটিতে করোনায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৪ জনে। ভারতে করোনায় প্রাণহানি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর তৃতীয় সর্বাধিক। তবে দেশটির মানুষ নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে অভিযোগ।
ভারতের কিছু অঞ্চল ইতোমধ্যে করোনার প্রতিরোধে ফের বিধিনিষেধ জারি করেছে। এরমধ্যে লকডাউন ও রেস্তোরাঁ বন্ধের মতো নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। বিবেচেনায় রয়েছে অন্যান্য অঞ্চলেও বিধিনিষেধ জারির বিষয়টি। যেভাবেই হোক নতুন করে এই সংক্রমণ ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ববিধি মানার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার ক্ষেত্রে মানুষের অনীহাকে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম ও বড় কারণ হিসেবে অভিহিত করছেন চিকিৎসকরা। তারা সতর্ক করে দিয়ে আরও বলেছেন যে, মহারাষ্ট্রের মতো অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো রোগীতে পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ২৫ হাজার ৬৬১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে মহারাষ্ট্রে। এরমধ্যে তিন হাজার হলেন ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। করোনায় মৃত্যুও সেখানে বেশি। ভারতে করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম থেকেই এই রাজ্যটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এগারো কোটির বেশি জনসংখ্যার রাজ্য মহারাষ্ট্রের বেশ কিছু জেলায় ফের লকডাউন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া প্রেক্ষাগৃহ, হোটেল ও রেস্তোরাঁর জন্য চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত জারি করা হয়েছে বিভিন্ন বিধিনিষেধ। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে মানুষকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে বিস্তৃত অঞ্চল আবারও লকডাউন করে দেওয়া হবে।
করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক আক্রান্ত ভারতে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির করোনা সংক্রমণ চূড়ায় উঠেছিল। তখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল লাখের কাছাকাছি। এরপর অবশ্য ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমতে শুরু করে। তবে গত মাস থেকে তা আবারও তা বাড়তে শুরু করেছে। আর এখন এই সংখ্যাটা গিয়ে ঠেকেছে দৈনিক প্রায় ৪১ হাজারে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলেই শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
মহারাষ্ট্র ছাড়াও ভারতের পাঞ্জাব, কর্ণাটক, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে নতুন করে করোনায় ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজধানী নয়াদিল্লিতেও বিগত দুই সপ্তাহ ধরে ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়ছে ধীরে ধীরে। এতে নগর কর্তৃপক্ষ দিনে সোয়া লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে; যা আগে ছিল দৈনিক চল্লিশ হাজারের মতো।
আগস্টের মধ্যে ত্রিশ কোটি মানুষ অর্থাৎ দেশের এক-পঞ্চমাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটির সরকার। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র চার কোটি বিশ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার এই সংখ্যাটা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এএস