পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর কী ঘটেছিল রাশিয়ায়?

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত মার্চে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি এই পরোয়ানার বিষয়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে, তা ঠিক করতে বিশেষ বৈঠকও আহ্বান করা হয়।
রাশিয়ার বর্তমান ও সাবেক সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির স্বতন্ত্র সংবাদমাধ্যম মস্কো টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশি ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ সৈন্যরা। এই অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা গত মাসে ইউক্রেনীয় শিশুদের নির্বাসনে সংশ্লিষ্টতার দায়ে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পুতিন ইউক্রেনীয় শিশুদের রাশিয়ায় নির্বাসিত করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে আইসিসিতে আনা অভিযোগে বলা হয়।
তবে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু পর্দার আড়ালে সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে মস্কোতে উদ্বেগও দেখা গেছে বলে জানিয়েছে মস্কো টাইমস।
দেশটির ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির একজন সংসদীয় ডেপুটি মস্কো টাইমসকে বলেছেন, আইসিসির এই পরোয়ানা মূলত রাশিয়ায় সরকার উৎখাতের আহ্বান।
রাশিয়ার এই সংবাদমাধ্যম অন্তত সাতজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে। তারা বলেছেন, আইসিসির সিদ্ধান্ত রাশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি কি না কিংবা এই পরোয়ানা কীভাবে পুতিনকে বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপন করে এবং রুশ প্রেসিডেন্টের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এর কোনও প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে ছিল মস্কো।
রাশিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ক্ষমতা ভোগ করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। যে কারণে তাকে আইসিসির কাছে হস্তান্তরের কোনও সম্ভাবনা ক্রেমলিনের নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি রাশিয়ায় রয়েছেন, ততক্ষণ তার গ্রেফতার হওয়ার কোন ঝুঁকি নেই। তবে রাশিয়া ত্যাগ করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এ কারণে ভ্রমণ সীমিত করতে হতে পারে তাকে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে আন্তর্জাতিক পরোয়ানার ঘটনায় তিনি এমন কোনও দেশ ভ্রমণে যাবেন না, যারা তাকে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেবে।
গত ১৭ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের শিশু অধিকারবিষয়ক কমিশনার মারিয়া আলেকসেয়েভনা লভোভা-বেলোভা ও পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। এই ঘটনার পর আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে রাশিয়া। দেশটির কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তীব্র সমালোচনা এবং এর বৈধতা অস্বীকার করেছেন।
তবে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন আইসিসির পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্তে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আইসিসি ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক এই আদালতকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এসএস