মণিপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলো হাজারো মানুষ

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে চলমান সহিংসতা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। রাজ্যটিতে এবার ভারতের কেন্দ্রীয় এক মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এক হাজারেরও বেশি মানুষ হামলা চালিয়ে মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুক্রবার (১৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অব্যাহত সহিংসতার মধ্যে মণিপুরে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে রঞ্জন সিংয়ের বাড়িতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রমণ চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ঘটনার সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তার ইম্ফলের বাড়িতে ছিলেন না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
— ANI Digital (@ani_digital) June 16, 2023
এনডিটিভি বলছে, সহিংসতা রোধে রাজধানী ইম্ফলে কারফিউ জারি রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিক্ষুব্ধ জনতা কংবায় মন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছাতে সক্ষম হয় এবং একপর্যায়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘটনার সময় মন্ত্রীর বাসভবনে নয়জন সিকিউরিটি এসকর্ট কর্মী, পাঁচজন সিকিউরিটি গার্ড এবং আটজন অতিরিক্ত গার্ড ছিলেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে রঞ্জন সিংয়ের বাসভবনের একজন নিরাপত্তা কর্মী জানান, হামলার সময় জনতা চারদিক থেকে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে।
এসকর্ট কমান্ডার এল দীনেশ্বর সিং বলেছেন, ‘আমরা হামলার এই ঘটনাটি আটকাতে পারিনি। কারণ বিশাল এই জনতা কার্যত অপ্রতিরোধ্য ছিল এবং আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। তারা চারদিক থেকে পেট্রোল বোমা ছুঁড়েছে.. বিল্ডিংয়ের পেছনের বাই লেন থেকে এবং এমনকি সামনের প্রবেশদ্বার থেকেও। আমরা মোটেই এই জনতাকে প্রতিরোধ করতে পারিনি।’
এসকর্ট কমান্ডার বলেন, প্রায় ১২০০ জনের বিশাল জনতা সেখানে এসে হামলা চালায়।
— ANI (@ANI) June 16, 2023
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতের কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটল। এর আগে গত মে মাসে প্রথমবার হামলার সময় মন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছিলেন।
এছাড়া মণিপুরে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার মধ্যে গত বুধবার রাতে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নেমচা কিপজেনের বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে দেয় জনতা। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই রাজ্যটির একমাত্র নারী মন্ত্রী। অবশ্য হামলার সময় নেমচা কিপজেনও তার বাড়িতে ছিলেন না বলে কর্মকর্তারা জানান।
জাতিগত সংঘর্ষের কারণে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। আর সর্বশেষ এই ঘটনা মণিপুর রাজ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। মূলত মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যটি অস্থিতিশীল রয়েছে।
— NDTV News feed (@ndtvfeed) June 16, 2023
সংবাদমাধ্যম বলছে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে মণিপুর রাজ্যের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাঝে উত্তেজনা চলছে। গত মাসের শুরুর দিকে স্থানীয় কুকি উপজাতিরা তফসিলি উপজাতির মর্যাদার দাবির প্রতিবাদে ৩ মে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ ঘিরে ওই দিন পার্বত্য এই রাজ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা ওই সহিংসতায় ৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এতে কোটি টাকার সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে দফায় দফায় আন্দোলনও হয়। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের। তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।
সম্প্রতি ভারতের হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।
টিএম