মহররমে নিরাপত্তা : দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন পাকিস্তানে

আরবি হিজরি সালের শেষ মাস মহররমে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে দেশজুড়ে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে এ বিষয়ক একটি প্রস্তাবের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, পাকিস্তানের ৪ প্রদেশ পাঞ্জাব, সিন্ধ, খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান এবং ৩ কেন্দ্রশাসিত এলাকা রাজধানী ইসলামাবাদ, গিলগিট-বালটিস্তান এবং আজাদ জম্মু-কাশ্মির— অর্থাৎ দেশজুড়ে মহররম মাসে নিরাপত্তা পরিস্থিতি তদারকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও সক্রিয় থাকবেন।
এছাড়া মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ (২৮-২৯ জুন) দেশজুড়ে মোটরসাইকেলে আরোহী পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা এবং পুলিশের অনুমতি ব্যতীত কোনো সমাবেশ বা মিছিল না করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার ১ মহররম থেকেই কার্যকর হয়েছে এসব পদক্ষেপ।
মহররমের মাস মুসলিম, বিশেষত শিয়া মুসলিমদের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ইরাকের কারবালায় নিহত হয়েছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র এবং ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.)’র কনিষ্ঠপুত্র ইমাম হোসেন (রা.)। খিলাফত নিয়ে হযরতের সাহাবি মুয়াবিয়া (রা.)’র পুত্র এজিদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও তার ফলে যুদ্ধের জেরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হয়েছিলেন ইমাম হোসেন (রা.)। যেদিন তিনি শহীদ হন, সেই দিনটি ছিল মহররমের ১০ তারিখ, যা সংক্ষেপে ‘আশুরা’ নামে পরিচিত।
হযরত আলী (রা.)’র অনুসারী হওয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিয়া মুসলিমদের মতো পাকিস্তানের শিয়া মুসলিমরাও মহররম মাসটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণভাবে পালন করেন। মহররম মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন মিছিল বের করেন তারা। এই মিছিলের নাম ‘তাজিয়া’।
গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে কট্টর সুন্নিপন্থী বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিকশিত হয়ে ওঠায় বর্তমানে মহররম মাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের জন্য। বিগত বিভিন্ন বছরে পাকিস্তানে শিয়া মুসলিমদের মিছিল, মসজিদ এবং ইমামবাড়ায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
প্রতিবেশী আফগানিস্তানে শিয়া মুসলিমদের ওপর হামলার নজির সবচেয়ে বেশি। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান গোষ্ঠীর পাকিস্তানি শাখা তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী। পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে আফগানিস্তানের অনুকরণে সেই দেশকে চালাতে চায় টিটিপি।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে টিটিপি; কিন্তু গত নভেম্বরে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে আর মেয়াদবৃদ্ধি করেনি পাকিস্তান সরকার। এর মধ্যে গত কয়েক মাসে পাকিস্তানে কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে মহররম মাসে শিয়াদের ওপর হামলার আশঙ্কা থেকেই মহররম মাসজুড়ে দেশে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিল পাকিস্তান সরকার।
সূত্র : জিও নিউজ
এসএমডব্লিউ