কেন পশ্চিমা ও ফ্রান্সবিরোধী হয়ে উঠল নাইজারের মানুষ?

পূর্ব আফ্রিকার দেশ নাইজারে গত ২৬ জুলাই রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। ওইদিন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে অবরুদ্ধ করে ক্ষমতা নিয়ে নেয় তারা।
সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই সাধারণ মানুষ এর পক্ষে রাস্তায় নামেন। এরপর পশ্চিমা ও ফ্রান্স বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। অনেকে ফ্রান্সের দূতাবাসে হামলা চালান। অপরদিকে রাশিয়ার পতাকা হাতে মিছিল ও বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
কেন নাইজারের সাধারণ মানুষ পশ্চিমা ও ফ্রান্সবিরোধী হয়ে উঠল এবং রাশিয়ার পক্ষে গেল?
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোম পশ্চিমা ও ফ্রান্সপন্থি নেতা ছিলেন। ২০২১ সালে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেন তিনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনের ভেতর ছিল ফরাসি বিরোধী মনোভাব। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরই তারা এর বহিঃপ্রকাশ করেন।
সাধারণ মানুষের দাবি, সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স নাইজারকে এখনো শোষণ করে যাচ্ছে। নাইজার ইউরোনিয়াম উৎপাদনের দিক দিয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ দেশ। কিন্তু এসব ইউরোনিয়াম নিয়ে যাচ্ছে ফ্রান্স।
আরও পড়ুন>>> নাইজারে যে কোনো সময় বেঁধে যেতে পারে বড় যুদ্ধ
নাইজারের মাটিতে রয়েছে ফরাসি সেনাদের বিশাল ঘাঁটি। যেটি ব্যবহার করে দেশটিতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখছে তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির কেন্দ্রীয় শহর জিন্দারের এক ব্যবসায়ী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি রাশিয়াপন্থি এবং ফ্রান্সকে পছন্দ করি না। ছোটকাল থেকেই আমি ফ্রান্সের বিরোধী।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘তারা ইউরেনিয়াম, পেট্রোল এবং স্বর্ণসহ আমাদের সব প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করেছে। গরীব নাইজেরিনরা তিনবেলা খেতে পারে না শুধুমাত্র ফ্রান্সের কারণে।’
তিনি জানিয়েছেন, সোমবার তার শহরের কয়েক হাজার মানুষ অভ্যুত্থানের পক্ষে রাস্তায় নেমেছেন।
এ ব্যবসায়ী রাশিয়ার পতাকার আদলে তৈরি একটি জামা পরে রাস্তায় নেমেছিলেন। একজন স্থানীয় দর্জিকে দিয়ে জামাটি তৈরি করেছেন তিনি।
অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও প্রায় আড়াই কোটি জনসংখ্যার দেশ নাইজারের বেশিরভাগ মানুষই দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন।
জিন্দারের এ ব্যবসায়ী মনে করেন ফ্রান্স শোষণ করলেও রাশিয়া তাদের সহায়তা করবে। তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই রাশিয়া আমাদের নিরাপত্তা ও খাদ্য দিয়ে সহায়তা করবে। আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে রাশিয়া প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।’
তবে জিন্দারের এক কৃষক এ মতামতের বিরোধীতা করেছেন। তার মতে সামরিক অভ্যুত্থান সবার জন্য খারাপ খবর। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে রুশদের আসার বিষয়টিকে আমি সমর্থন জানাই না। তারা সবাই ইউরোপিয়ান; কেউ আমাদের সহায়তা করবে না। আমি আমাদের দেশকে ভালোবাসি, আশা করি সবাই শান্তিতে থাকতে পারব।’
এদিকে আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোর মতো নাইজারেও ইসলামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর আধিপত্য রয়েছে। তারা প্রায়ই সাধারণ মানুষ ও সেনাদের ওপর হামলা চালায়। সাধারণ মানুষের দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠীকে থামাতে ফ্রান্স কিছুই করেনি। এখন তাদের আশা রুশরা এসে পরিস্থিতি বদলাতে পারবে।
নাইজারের প্রতিবেশী মালি এবং বুরকিনা ফাসোতেও ঠিক একইভাবে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। ওই দুই দেশেও নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতুাচ্যুত করার অন্যতম কারণ ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে না পারা।
এদিকে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে নাইজারের সামরিক শাসকদের গত রোববার সাতদিনের সময় বেঁধে দেয় পূর্ব আফ্রিকার ১৫ দেশের জোট ইকোনোমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোয়াস)। তারা হুমকি দেয়, এই সময়ের মধ্যে বাজোমের প্রেসিডেন্ট পদ না ফিরিয়ে দিলে সামরিক হস্তক্ষেপও নেওয়া হতে পারে। তবে নাইজারের প্রতিবেশী মালি ও বুরকিনা ফাসোর সেনা শাসকরা হুমকি দিয়েছে, যদি কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে এটি ‘যুদ্ধ ঘোষণার সামিল হবে’ যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
সূত্র: আল জাজিরা
এমটিআই