হরিয়ানায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ বস্তি

অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দাঙ্গায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার তাউরু শহরের একটি বস্তি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার হরিয়ানা রাজ্য সরকারের নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও নেতৃত্বে তাউরুর মোহাম্মদপুর রোডের সেই বস্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
হরিয়ানার বাণিজ্যিক কেন্দ্র বলে পরিচিত গুরুগ্রামের নুহ এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই বস্তিটিতে ২৫০টিরও বেশি ঘর ছিল। সেসব ঘরের বাসিন্দারা গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে হরিয়ানায় আছেন।
তবে রজ্য প্রশাসনের ভাষ্য, সরকারি জমির ওপর নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা সেই বস্তিটিতে ‘অবৈধ বাংলাদেশিরা’ থাকতেন।
প্রসঙ্গত, হরিয়ানার রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিল, তাউরু শহরের এই বস্তির বাসিন্দাদের সবাই অবৈধ বাংলাদেশি। তারা প্রথমে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আসামে অনুপ্রবেশ করেছিলেন; কিন্তু আসামের সরকার সেখানকার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে তাদের একটি অংশ হরিয়ানায় এসে এই তারুর শহরে বস্তি গড়ে তোলেন।
গত সোমবার নুহতে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। এছাড়া জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য দোকানপাট, বাড়ি-ঘর এবং গাড়ি।
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশ হরিয়ানায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অশান্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছে মনু মানেশর নামের এক উগ্রবাদী গোরক্ষককে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, কথিত গোরক্ষক মনু মানেশরের একটি ভিডিওর মাধ্যমে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। তিনি ভিডিওতে, হরিয়ানার গুরুগ্রামের মুসলিম অধ্যুষিত নুহ বিভাগে হিন্দুদের একটি মিছিল আয়োজন ও সেখানে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন। আর তার মিছিলে যোগ দেওয়ার ঘোষণা শুনে ক্ষিপ্ত হন সেখানকার মুসলিমরা। কারণ উগ্রবাদী মনু গত বছর দুইজন মুসলিম রাখালকে নিশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন।
মনু মিছিলে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মুসলিমরা তাকে আটকানোর ঘোষণা দেন। তার কথা অনুযায়ী, সোমবার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সেই মিছিল শুরু করেন। এরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর এই উত্তেজনা চূড়ান্ত রূপ নেয় মঙ্গলবার মধ্যরাতে। এদিন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম, হোমগার্ডের দুই সদস্য নিহত হন। এরপর বুধবার এ সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়ায়।
মঙ্গলবার রাতেও সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলিমদের দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র ও গাড়িতে আগুন দেন। তবে যে মনু মানেশরের জন্য এই রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ, তিনি মিছিলে যোগ দেননি।
নুহের বিধায়ক (এমএলএ) চৌধুরি আফতাব আহমেদ এই দাঙ্গার জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। তবে রাজ্য সরকারে আসীন বিজেপি সরকারের নেতাদের বিশ্বাস, এই দাঙ্গার জন্য হরিয়ানায় বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীরা দায়ী।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার জানিয়েছেন, অবৈধ এই অভিবাসীদের জন্য এত তীব্র রূপ নিয়েছে দাঙ্গা। হরিয়ানার রাজ্য সরকারের একটি সূত্র এনডিটিভিকে বলেছে, তাউরু শহরের এই বস্তিটি ভেঙে ফেলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে নির্দেশ দিয়েছেন।
এসএমডব্লিউ