বিশ্বের প্রায় পৌনে ৬ কোটি মানুষ করোনা থেকে সুস্থ

বিশ্বে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা প্রায় পৌনে ৬ কোটি। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা নাগাদ বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মোট মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭২ লাখ ৯১ হাজার ২১৮ জন।
এই ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা নাগাদ বিশ্বে করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার ১১৩ জন।
গেল শুক্রবার একই সময় নাগাদ বিশ্বে করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭ কোটি ৯৭ লাখ ১৪ হাজারের বেশি ছিল।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা নাগাদ বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৮৮৪ জন।
গেল শুক্রবার একই সময় নাগাদ বিশ্বে করোনায় মোট মারা গিয়েছিলেন ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫১ জন।
করোনা পরিস্থিতির মোটামুটি একবছরের মাথায় এসে আক্রান্ত, সুস্থ, মৃত্যু বাদেও আলোচনায় রয়েছে ভ্যাকসিন। বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে টিকা দেয়া শুরু করে দিয়েছে। তবে এরই মধ্যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির একটি পরিবর্তিত রূপ (স্ট্রেন) নিয়ে নতুন করে সতর্কতা জারি করতে হয়েছে বিভিন্ন দেশকে।
নতুন স্ট্রেন নিয়ে কেন উদ্বেগ?
মূলত তিনটি কারণে করোনাভাইরাসের নতুন এই স্ট্রেনটি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
• এটি ভাইরাসের অন্য সংস্করণগুলোকে প্রতিস্থাপিত করছে
• এটির বিভাজন বা রূপান্তর ভাইরাসের কিছু অংশে পরিবর্তন আনে, যা গুরুত্বপূর্ণ
• এসব বিভাজনের মধ্যে বেশ কিছু ল্যাবে পরীক্ষার পর দেখা গেছে যে এগুলো মানুষের দেহের কোষকে সংক্রমিত করার ভাইরাসের যে সক্ষমতা তা বাড়ায়
বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৯৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৭ জন। মারা গেছে প্রায় ৩ লাখ ৪১ হাজার ১৩৮ জন।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৮ হাজার ৭২৫ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪০ জন।
ব্রাজিল আছে তৃতীয় অবস্থানে। দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৭৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৮৫ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ৯১ হাজার ১৪৬ জন।
তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। ফ্রান্স পঞ্চম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
চীনে করোনাভাইরাসে প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি।
১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে, ২ ফেব্রুয়ারি।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট রোগের নামকরণ করে ‘কোভিড-১৯’।
১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকাল রোববারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৪৮ জনে। দেশে করোনায় মোট ৭ হাজার ৪৫২ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬১ জন।
দেশে ভ্যাকসিনের কী অবস্থা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন, ভ্যাকসিন আনার পুরো প্রস্তুতি শেষ। জানুয়ারিতেই দেশে ভ্যাকসিন আসবে। জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশে অক্সফোর্ডের তিন কোটি করোনার ভ্যাকসিন আসবে। এখন ভ্যাকসিন তৈরি ও অনুমোদনের অপেক্ষা। মন্ত্রীর ভাষায়, শুরুতে করোনার চিকিৎসা পদ্ধতি জানা ছিল না। ফলে শুরুতে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন বলে মনে করছেন তিনি।
‘আমাদের (বাংলাদেশের) দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের নিচে। আর ১৮ বছরের নিচে ৪০ শতাংশ মানুষ। এ মুহূর্তে এদের ভ্যাকসিনের দরকার নেই। এছাড়া গর্ভবতী নারী ও কিছু অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক
শবিার থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুরু করেছে গণ টিকাদান কর্মসূচি। সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ২০০কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে ইইউ।
নতুন স্ট্রেন পৌঁছেছে জাপানেও
জাপানেও করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন) শনাক্ত হয়েছে। এরপর জাপান সরকার বিদেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীদের জন্য দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানুয়ারি মাসের শেষ দিক পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।
নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুই ব্যক্তি এখন টোকিওর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন উড়োজাহাজ চালক। তিনি ১৬ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে টোকিও ফিরেছিলেন। তার পরিবারের এক নারী সদস্যের ক্ষেত্রেও নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।
করোনাই শেষ মহামারি নয়: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বছরের শেষ দিকে এসে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আরও একবার আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসাস। তিনি বলেন, এটাই (করোনাভাইরাস) শেষ মহামারি নয়। এই মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা বিশ্বকে আগামী দিনে আসা সংকটের মোকাবিলা করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আতঙ্ক ও অবহেলার একটি চক্রের ওপর চলছে গোটা বিশ্ব। যেকোন ধরনের রোগ, মহামারি বা দুর্যোগ শুরু হলে সেটা আমরা অর্থ দিয়ে মোকাবিলা করার চেষ্টা করি। তাতে সাময়িক সাফল্য আসার পরই সেই বিষয়টি ভুলে যায় বিশ্বের মানুষ। কিন্তু সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী সংকট মোকাবিলার করার কথা চিন্তাও করা হয় না। বিধ্বংসী মহামারি মোকাবিলার জন্য বর্তমান বিশ্ব এখনও তৈরি হয়নি বলেও সতর্ক করেন তিনি।
এনএফ