জিম্বাবুয়ের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, ৩৯ পর্যবেক্ষক গ্রেপ্তার

ব্যালট পেপার সংকটের কারণে দ্বিতীয় দিনে গড়ানো জিম্বাবুয়ের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মাঝেই বৃহস্পতিবার নির্বাচনের দ্বিতীয় দিনে দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৩৯ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশটির পুলিশ বলছে, বুধবার রাতে একাধিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত পর্যবেক্ষকদের কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ।
জিম্বাবুয়ের পুলিশের মুখপাত্র পল নায়াথি বলেছেন, কিছু সুশীল সমাজের সংগঠনের কথিত নির্বাচনী ফলাফলের সমন্বয় করছিলেন গ্রেপ্তারকৃতরা। দেশটির মানবাধিকার আইনজীবীদের একটি গোষ্ঠীর তথ্য অনুযায়ী, কিছু পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ডাটা কেন্দ্র থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা দেশটির সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী প্রখ্যাত দুই সংস্থা— জিম্বাবুয়ে ইলেকশন সাপোর্ট নেটওয়ার্ক (জেডইএসএন) ও ইলেকশন রিসোর্স সেন্টারের (ইআরসি) সদস্য। সংস্থা দুটি দেশটিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
জিম্বাবুয়ের নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গণনা করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সংস্থা দুটি পৃথকভাবে নির্বাচনী ফলাফল তৈরি করছে।
এক বিবৃতিতে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল সিটিজেনস কোয়ালিশন ফর চেঞ্জের (সিসিসি) মুখপাত্র চার্লস কোয়ারাম্বা বলেছেন, এমন চূড়ান্ত এবং জঘন্য পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন দলের গভীর আতঙ্কের স্পষ্ট লক্ষণ ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বলেছেন, ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকারি এই পদক্ষেপ চরম লজ্জাজনক। গণমাধ্যম, রাজনৈতিক কর্মী ও পর্যবেক্ষকদের দেশ থেকে নিষিদ্ধ অথবা নির্বাসিতও করা হচ্ছে। এসবই পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচনের সত্য প্রচারে ক্ষমতাসীন দলের মরিয়া হয়ে বাধা দেওয়ার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।
জিম্বাবুয়ের এবারের নির্বাচনে সিসিসির নেতা নেলসন চামিসা দেশটির ৮০ বছর বয়সী ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগোয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমারসনের রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ ১৯৮০ সালে দেশটির স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ক্ষমতায় রয়েছে।
ব্যালট পেপার প্রিন্টে বিলম্বের কারণে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দিনে প্রবেশ করেছে। দেশটির ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনার কোনও নজির নেই। সিসিসি বলছে, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ভোটে কারচুপি করার জন্যই ব্যালট পেপার সংকট তৈরি করেছে।
ব্রিটেনের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ নিক চিজম্যান বলেছেন, ভোটের সঠিক ফলাফল তৈরি ঠেকানোর সুস্পষ্ট প্রয়াস হচ্ছে পর্যবেক্ষকদের গ্রেপ্তার। জানু-পিএফ হেরে যেতে পারে এবং নির্বাচনী ফল নিয়ে যে আতঙ্কিত, এটি তারই পরিষ্কার প্রমাণ।
জিম্বাবুয়ের এই নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কমনওয়েলথ, আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আফ্রিকার দক্ষিণের ১৬ দেশের সংগঠন সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটিও (এসএডিসি) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস