সীমান্তে উত্তেজনা : গাজার কর্মীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ইসরায়েলের

গত বেশ কিছুদিন আগে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের এরেজ সীমান্ত এলাকায় শুরু হওয়া উত্তেজনার জেরে এবার গাজার কর্মীদের ওপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েলের সরকার। বুধবার ইসরায়েল ও গাজার একমাত্র সীমান্তপথ এরেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দারিদ্র্যপীড়িত গাজা ভূখণ্ডের অনেকেই ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর এবং পশ্চীম তীরে প্রতিদিন কাজ করতে যান। এরেজ সীমান্ত দিয়েই তাদের প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। ইসরায়েলের সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি কর্মী ও তাদের ওপর নির্ভরশীল লোকজন।
ইসরায়েলে বর্তমানে ছুটি চলার কারণে সেখান থেকে গাজায় নিজ পরিবার পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন প্রায় ৮ হাজার ফিলিস্তিনি। সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের ইসরায়েলে ফিরে যাওয়ার পথ আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে।
সাধারণ ফিলিস্তিনিরা অবশ্য আগে থেকেই এ বিপদের আশঙ্কা করছিলেন। বুধবার অনেক ফিলিস্তিনিকে সীমান্তের কাছে গিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে। অনেকে রাতের বেলায়ও ঘুমাচ্ছেন সেখানে।
রোববার থেকে সীমান্তে অবস্থান নেওয়া এক ফিলিস্তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি ৫ সন্তানের পিতা। আমার স্ত্রী-সন্তানরা আমার উপার্জনের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। যদি শিগগিরই সীমান্ত না খোলে, সেক্ষেত্রে আমরা চরম সংকটে পড়ব।’
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সমন্বয়কারী সংস্থা কোগাটের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কবে নাগাদ এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হবে— তা এখনও নির্ধারিত হয়। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর।
কয়েক মাস আগে জেরুজালেমের টেম্পল মাউন্টে অবস্থিত আল আকসা মসজিদের চত্বরে দাঙ্গা হয়েছিল ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে। সেই দাঙ্গায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারও করেছিল ইসরায়েলি পুলিশ। বর্তমানে তারা ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আছেন।
কিন্তু কারাগারে সেসব ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে— এই অভিযোগে দু’সপ্তাহ আগে সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে হামাস। এর মধ্যে কয়েকবার ইসরায়েলের সীমান্ত চেকপোস্ট ও অন্যান্য লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বিস্ফোরক ছোড়ার অভিযোগও উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সেই বিক্ষোভ লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীরা। এতে একজন ফিলিস্তিনি নিহত হন, আহত হন আরও ১১ জন। তার পরের দিনই এই নিষেধজ্ঞা জারি করল ইসরায়েল
গাজা থেকে কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্য আমদানি করত ইসরায়েল। কিন্তু কয়েকটি চালানে বিস্ফোরকের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর চলতি মাসের প্রথম দিকে সেখান থেকে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন গাজার কৃষকরা।
বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র্যপীড়ত এলাকা গাজায় বেকারত্বের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলে কর্মরত ফিলিস্তিনিদের কল্যাণে গাজায় প্রতিদিন ঢুকতো ৮ লাখ ৪২ হাজার ডলার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই অর্থের আগমনও এখন থেকে বন্ধ।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের শ্রমমন্ত্রী আয়মান আবু কারাইম রয়টার্সের কাছে হতাশা জানিয়ে বলেন, ‘এই শ্রমিকরা খুবই দরিদ্র। পরিবারের ভরণপোষনের মতো বিকল্প কোনো ব্যবস্থা তাদের হাতে নেই…এটা একটা সামষ্টিক শাস্তি।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ